সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: দীর্ঘ বছরের কূটনৈতিক ও আইনি মল্লযুদ্ধের পর শোনা যাচ্ছিল ইয়েমেনে খারিজ হয়ে গিয়েছে নিমিশা প্রিয়ার মৃত্যুদণ্ড। একাধিক সংবাদমাধ্যম দাবি করে ভারতীয় সুন্নি সম্প্রদায়ের মুসলিম ধর্মগুরু কান্দাপুরম এপি আবুবকর মুসলিয়ার দপ্তর এই দাবি করেছে। তবে সেই তথ্য ভুল বলে জানা যাচ্ছে। সরকারি সূত্রে দাবি করা হয়েছে, নিমিশা প্রিয়ার মৃত্যুদণ্ডের সাজা বদলে দেওয়ার যে দাবি করা হচ্ছে তা ভুয়ো। যদিও আনুষ্ঠানিকভাবে এই বিষয়ে সরকারের তরফে কোনও মন্তব্য করা হয়নি।
সোমবার সকালে সংবাদ সংস্থা এএনআইকে আবুবকরের দপ্তর জানিয়েছিল, গত ১৬ জুলাই মৃত্যুদণ্ড পিছিয়ে দেওয়া হয়েছিল নিমিশার। এবার সেই সাজা পুরোপুরি বদলে দেওয়া হয়েছে। সম্প্রতি ইয়েমেনের রাজধানী সানায় দেশটির শীর্ষ কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে এক উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক হয়। সেই বৈঠকেই মৃত্যুদণ্ডের সাজা খারিজ করা হয়েছে। যদিও মুসলিয়ার দপ্তর এটাও জানিয়েছে, ইয়েমেন বা ভারত সরকারের তরফে এই বিষয়ে কোনও আনুষ্ঠানিক ঘোষণা এখনও করা হয়নি।
কূটনৈতিক পথ যখন কার্যত বন্ধ হয়ে গিয়েছে, নিমিশার মৃত্যুদণ্ড আটকানোর এখন একমাত্র উপায় ‘ব্লাড মানি’। তবে সেখানেও প্রতি পদে আসছিল বাধা। এহেন পরিস্থিতিতেই কেরলের বাসিন্দা নিমিশা প্রিয়াকে বাঁচাতে এগিয়ে এসেছিলেন সুন্নি সম্প্রদায়ের মুসলিম ধর্মগুরু কান্দাপুরম এপি আবুবকর মুসলিয়ার। ইয়েমেনের ধর্মীয় নেতৃত্বের সঙ্গে আলোচনা শুরু করেন তিনি। যদিও রক্তের দাম নিতে শুরু থেকেই নারাজ ছিলেন মৃত তালাল মেহেদির ভাই আবদুল মেহেদি। এই পরিস্থিতির মাঝেই মুসলিয়ার দপ্তরের দাবি শোরগোল ফেলে দেয় দেশে। এরপরই সরকারি সূত্রের দাবি করে সংবাদ সংস্থা এএনআই-এর তরফে জানানো গেল, ইয়েমেনে নিমিশার মৃত্যুদণ্ড খারিজ করা হয়নি যে দাবি করা হচ্ছে তা পুরোপুরি ভুল।
Earlier, Indian Grand Mufti, Kanthapuram AP Abubakker Muslaiyar’s office released a statement saying that the death sentence of Nimisha Priya, which was previously suspended, was overturned
— ANI (@ANI)
উল্লেখ্য, এক ব্যক্তিকে হত্যার অপরাধে ২০১৭ সাল থেকে ইয়েমেনের জেলে বন্দি রয়েছেন নিমিশা। ২০১৮ সালে এই মামলায় তাঁকে মৃত্যুদণ্ডের সাজা শোনায় ইয়েমেনের আদালত। তাঁর প্রাণ বাঁচাতে এত বছর ধরে আইনি লড়াই চালিয়ে এসেছে নিমিশার পরিবার। প্রবাসী ভারতীয় ওই যুবতীর প্রাণভিক্ষার আবেদন রাষ্ট্রপতির কাছে পৌঁছলে তা খারিজ করে মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের নির্দেশ দেন সে দেশের প্রেসিডেন্ট রশিদ মহম্মদ আল আলিমি। এই পরিস্থিতিতে প্রিয়ার মৃত্যুদণ্ড রদ করতে তৎপর হয় বিদেশমন্ত্রক। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ভারত সরকারের সেই চেষ্টাও ব্যর্থ হয়।
কেরলের পালাক্কড় জেলার বাসিন্দা নিমিশা ২০০৮ সাল থেকে ইয়েমেনের এক হাসপাতালে কাজ করতেন। ২০১৪ সালে তাঁর স্বামী ও কন্যা ভারতে ফিরে এলেও নিমিশা সেখানে থেকে যান। উদ্দেশ্য ছিল ইয়েমেনে ক্লিলিক খোলা। সেখানে তালাল আবদো মেহদি নামে এক ব্যক্তির সঙ্গে আলাপ হয় তাঁর। দুজন মিলে সেখানে এক ক্লিনিক খোলেন। পরে এই ক্লিনিকের অংশীদারিত্ব নিয়ে অশান্তি বাধে দুজনের মধ্যে। নিমিশার পাসাপোর্ট কেড়ে নেয় সে। পুলিশে অভিযোগ জানিয়ে কোনও ফল না হওয়ায়। অন্য পথে হাঁটেন তিনি। ২০১৭ সালের ২৫ জুলাই ওই ব্যক্তিকে ঘুমের ইঞ্জেকশন দেন নিমিশা প্রিয়া। উদ্দেশ্য ছিল, অভিযুক্ত ঘুমিয়ে পড়লে পাসপোর্ট উদ্ধার করবেন। তবে ওষুধের ওভারডোজের কারণে মৃত্যু হয় ওই ব্যক্তির। এই অবস্থায় অন্য একজনের সাহায্য নিয়ে মেহদির দেহ টুকরো করে জলের ট্যাঙ্কে ফেলে দেন নিমিশা। এবং ইয়েমেন থেকে পালানোর সময় ধরা পড়ে যান। বিচারপর্বে ২০১৮ সালে ইয়েমেনের আদালত নিমিশাকে মৃত্যুদণ্ড দেয়। তাঁর প্রাণরক্ষায় সবরকম চেষ্টা করেন নিমিশার মা প্রেমা কুমারী। ভারত সরকারও তাঁর পাশে দাঁড়ায়। এমনকি সাজার বিরুদ্ধে বিগত কয়েক বছর ঘরে অনেকগুলি আন্তর্জাতিক সংগঠন লড়াই চালিয়ে যাচ্ছিল।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
নিয়মিত খবরে থাকতে ফলো করুন
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.