সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: হামাসের শিকড় গোড়া থেকে উপড়ে ফেলতে কোমর বেঁধে নেমেছেন ইজরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু। সেই লক্ষ্যে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বাণীও কানে তুলছেন না তিনি। হামলা চালিয়েছেন কাতারের মাটিতে। এই ঘটনায় যারপরনাই ক্ষুব্ধ ‘শান্তির দূত’ ট্রাম্প। সংবাদমাধ্যম সূত্রের খবর, নিজের ঘনিষ্ঠ মহলে আলোচনার সময় এই ঘটনায় ‘প্রিয় বন্ধু’ নেতানিয়াহুকে অশ্রাব্য ভাষায় গালিগালাজ করেছেন তিনি।
দ্য ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের রিপোর্ট অনুযায়ী, সম্প্রতি হোয়াইট হাউসে মার্কিন সচিবদের সঙ্গে বৈঠকে বসেছিলেন ট্রাম্প। সেখানে উপস্থিত ছিলেন মার্কিন বিদেশ সচিব মার্কো রুবিও। এই বৈঠকেই নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করে ট্রাম্প বলেন, নেতানিয়াহু তাঁর ইচ্ছাকে গুরুত্ব না দিয়ে সামরিক কার্যকলাপ চালিয়ে যাচ্ছে। যেখানে ট্রাম্প চাইছেন শান্তি আলোচনা সেখানেও হামলা চালাতে দ্বিতীয়বার ভাবছে না ইজরায়েল। ওই বৈঠকে ছাপার অযোগ্য ভাষায় নেতানিয়াহুকে গালি দেন ট্রাম্প। বিশেষজ্ঞদের দাবি অনুযায়ী, ট্রাম্পের এই ক্ষোভ কাতারে ইজরায়েলের হামলার প্রেক্ষিতে।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবরের হামলার পর হামাসকে শেষ করতে গাজায় লাগাতার অভিযান চালাচ্ছে ইজরায়েল। গত ২ বছরে নেতানিয়াহুর রোষানল থেকে রেহাই পায়নি ইরান, লেবানন, সিরিয়া, ইয়েমেনও। সেখানে ঘাঁটি গেড়ে থাকা হামাস নেতাদের বেছে বেছে হত্যা করা হয়েছে। সম্প্রতি হামলা চলে আমেরিকার স্নেহধন্য কাতারেও। গত ৯ সেপ্টেম্বর রাজধানী দোহাতে এয়ারস্ট্রাইক চালিয়েছিল ইজরায়েল। কাতারের আশ্রয়ে থাকা হামাস নেতাদের শেষ করতে এই অভিযান চালানো হয় ইজরায়েলি ডিফেন্স ফোর্সের (আইডিএফ) তরফে। যা নিয়ে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। তবে এই হামলার দায় ঝেড়ে ফেলেছিলেন ট্রাম্প। উপরন্তু নেতানিয়াহুর ঘাড়ে দোষ চাপিয়ে তিনি বলেন, “আমি এবিষয়ে কিছু জানতাম না। ইজরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর সিদ্ধান্তেই সব কিছু হয়েছে।” পাশাপাশি তাঁর দাবি ছিল, দোহা হামলার সতর্কবার্তা আমেরিকার কাছে ছিল না। যখন বিষয়টি তিনি জানতে পারেন সেই সময় কাতারকে সতর্কবার্তা পাঠানোর সময় পাওয়া যায়নি। গোটা ঘটনায় ইজরায়েলের উপর তিনি যে ক্ষুব্ধ সেটাও বুঝিয়ে দেন বিশ্বকে।
তবে পালটা ইজরায়েলের আধিকারিকদের দাবি অনুযায়ী, যে সময় হোয়াইট হাউসে এই হামলার বিষয়ে তথ্য পাঠানো হয়, তখন হামলা রুখে দেওয়ার জন্য পর্যাপ্ত সময় ছিল ট্রাম্পের কাছে। তিন আধিকারিক জানিয়েছেন, সেদিন সকাল ৮টায় নেতানিয়াহু ট্রাম্পকে ফোন করেন। এবং দোহা হামলার পরিকল্পনা জানান। এর ঠিক ৫০ মিনিট পর প্রথম হামলার খবর পাওয়া যায়। ইজরায়েলের আধিকারিক জানান, “ট্রাম্প নেতানিয়াহুর এই ফোনালাপে সব জানানো হলে ট্রাম্প কোনওরকম আপত্তি করেননি।” দ্বিতীয় আধিকারিক জানান, “হামলা রুখতে চাইলে ট্রাম্প তা করতে পারতেন। কিন্তু উনি সেটা করেননি।” এরপর ট্রাম্পের এই ক্ষোভ প্রসঙ্গে ওয়াকিবহাল মহলের মত, নিজেকে শান্তির দূত হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে লাগাতার চেষ্টা চালিয়ে যাওয়া ট্রাম্পের সামনে বর্তমানে প্রধান বাধা রুশ-ইউক্রেন যুদ্ধ থামানো। বহু চেষ্টা করেও সে পথে খুব একটা গতি আসছে। দ্বিতীয়ত, ইজরায়েল ও হামাসের যুদ্ধ থামাতেও ব্যর্থ তিনি। বন্ধু নেতানিয়াহু তাঁর কথা তো শুনছেনই না বরং অস্বস্তিতে ফেলছেন তাঁকে। যার জেরেই এবার তেলে-বেগুনে জ্বলে উঠলেন ট্রাম্প।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
নিয়মিত খবরে থাকতে ফলো করুন
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.