সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: গাজা শান্তিচুক্তির প্রথম দফায় একমত ইজরায়েল এবং হামাস। এমনটাই ঘোষণা করলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। প্রায় দু’বছর ধরে চলতে থাকা রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে কি তাহলে এবার ইতি পড়বে? এই প্রশ্নটিই এখন উঠতে শুরু করেছে।
বুধবার ট্রাম্প তাঁর সোশাল মিডিয়া ট্রুথ সোশালে লেখেন, ‘আমি গর্বিত গাজা শান্তিচুক্তির প্রথম দফায় একমত হয়েছে ইজরায়েল এবং হামাস। এর অর্থ প্যালেস্তাইনের সশস্ত্র গোষ্ঠীটি ইজরায়েলি পণবন্দিদের মুক্তি দেবে। পরিবর্তে ইজরায়েল গাজার কিছু অংশ থেকে তাদের সেনা তুলে নেবে।’ তিনি আরও লেখেন, ‘আরব এবং মুসলিম দেশগুলির কাছে এটি একটি গর্বের দিন। ইজরায়েল-হামাসের সংঘাত থামাতে আমি কাতার, মিশর এবং তুরস্ককের মতো মধ্যস্থতাকারী দেশগুলিকেও ধন্যবাদ জানাতে চাই।’
অন্যদিকে, হামাস একটি বিবৃতিতে জানিয়েছে, গাজায় যুদ্ধ বন্ধ করে শান্তি ফেরাতে তারা চুক্তিতে রাজি হয়েছে। ইহুদি দেশটি গাজার কিছুটা অংশ থেকে তাদের সেনা তুলে নেবে। পরিবর্তে ইজরায়েলি পণবন্দিদের মুক্তি দেবে হামাস। গাজা শান্তিচুক্তিকে ইতিমধ্যেই স্বাগত জানিয়েছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী কিয়ের স্টার্মার। অন্যদিকে, ইজরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুও তাঁর প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন। জানিয়েছেন, এটি ইজরায়েলের জন্য একটা বড় দিন।
মার্কিন প্রেসিডেন্টের এই ঘোষণার পরই উদযাপন শুরু করে দিয়েছেন প্যালেস্তানীয়রা। বছর পঁয়তাল্লিশ রান্ডা সামেহ বলেন, “আমি বিশ্বাস করতে পারছি না যে দু’বছর ধরে চলা এই দুঃস্বপ্নের অবসান ঘটতে চলেছে। প্রচুর মানুষের মৃত্যু হয়েছে। আমরা সর্বস্ব হারিয়েছি।” আরও এক বাসিন্দা বলেন, “আমাদের এবার বিশ্রামের প্রয়োজন। এই যুদ্ধে আমার ভাই এবং পরিবারের সদস্যদের মৃত্যু হয়েছে। ঠিক করে তাদের কবরও দেওয়া হয়নি। এবার সেই কাজগুলি আমি সম্পন্ন করব।”
গাজার যুদ্ধ থামানো নিয়ে কয়েকদিন আগেই ট্রাম্পের সঙ্গে বিশেষ বৈঠকে বসেন ইজরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু। তারপরেই হোয়াইট হাউসের তরফ থেকে ২০ দফা পরিকল্পনা প্রকাশ করা হয়। অবিলম্বে সংঘর্ষবিরতি থেকে শুরু করে গাজায় নতুন সরকার গঠন-একাধিক প্রস্তাব পেশ করেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। প্রস্তাবে বলা হয়েছে, গাজাকে পুরোপুরি সন্ত্রাসবাদীদের কবল থেকে মুক্ত করে একেবারে নতুনভাবে গড়ে তোলা হবে। যদি ইজরায়েল এবং হামাস দু’পক্ষই এই প্রস্তাব মেনে নেয় তাহলে সঙ্গে সঙ্গে যুদ্ধবিরতি হবে। ৭২ ঘণ্টার মধ্যে জীবিত এবং মৃত পণবন্দিদের ফেরাতে হবে। ইজরায়েলও সমস্ত বন্দিদের মুক্তি দেবে। তারপরই গাজার জন্য বিপুল ত্রাণ পাঠানো হবে, রাষ্ট্রসংঘ এবং রেড ক্রসের তত্ত্বাবধানে। এই প্রস্তাবের প্রথম দফায় অবশেষে সম্মত হল ইজরায়েল এবং হামাস।
উল্লেখ্য, প্রায় ২ বছর ধরে যুদ্ধ চলছে হামাস ও ইজরায়েলের মধ্যে। অসম এই লড়াইয়ের বলি হয়েছেন সাধারণ মানুষ। এখনও পর্যন্ত ইজরায়েলের হামলায় গাজায় মৃত্যু হয়েছে প্রায় ৬০ হাজার মানুষের। আহতের সংখ্যা দেড় লক্ষ ছাড়িয়ে গিয়েছে। তবে তার চেয়েও ভয়াবহ আকার নিয়েছে এখানকার খাদ্য সংকট। খিদের জ্বালায় এখানে মৃত্যু হয়েছে ২৪ জনের যার বেশিরভাগই শিশু। শুধু মাত্র জুলাই মাসে এখানে ৪০ জনের অনাহারে মৃত্যু হয়েছে যার মধ্যে ১৬ জন শিশু। ত্রাণ শিবিরে খাবার আনতে গেলে সেখানেও গুলি ছোড়া হচ্ছিল বলে খবর। এই পরিস্থিতিতে গাজায় শান্তি ফেরাতে ইজরায়েল এবং হামাস দু’পক্ষই রাজি হল।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
নিয়মিত খবরে থাকতে ফলো করুন
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.