Advertisement
Advertisement
Syria

বাশার-মুক্ত সিরিয়ায় ‘দ্রুজ’ গণহত্যা জেহাদিদের! কেন এই গোষ্ঠীর পাশে ইজরায়েল?

দ্রুজদের শিকড় ইসলামের সঙ্গে যুক্ত হলেও এদের ধর্মীয় রীতি সম্পূর্ণ ভিন্ন।

Mass killing in Syria, why Israel support Druze
Published by: Amit Kumar Das
  • Posted:July 21, 2025 2:23 pm
  • Updated:July 21, 2025 2:23 pm  

সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: দীর্ঘ বছরের রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের পর সিরিয়ার শাসক বাশার আল আসাদকে উৎখাত করেছে বিদ্রোহী শিবির। তবে বাশার দেশ ছাড়লেও হিংসার আগুন নেভেনি দেশটিতে। সুন্নি সংখ্যাগরিষ্ঠ সিরিয়ায় সংখ্যালঘু দ্রুজদের নির্মূল করতে উঠেপড়ে লেগেছে সেখানকার নিরাপত্তাবাহিনী। চলছে গণহত্যা। রিপোর্ট বলছে, সিরিয়ার দক্ষিণাঞ্চলীয় প্রদেশ আল-সুওয়াদাতে শয়ে শয়ে মানুষকে হত্যা করা হয়েছে দ্রুজ সম্প্রদায়ভুক্ত হওয়ার অপরাধে। সম্প্রতি সিরিয়ার মাটিতে হামলা চালিয়ে ইজরায়েলে তরফে বিবৃতি দেওয়া হয়েছে, দ্রুজদের রক্ষা করতেই এই পদক্ষেপ।

Advertisement

সম্প্রতি সংবাদমাধ্যম এনডিটিভিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে দ্রুজদের উপর চলতে থাকা ভয়াবহতার কথা তুলে ধরেন এই সম্প্রদায়ের ২১ বছর বয়সি যুবক। মাজদ আল শায়ের নামে ওই যুবক বলেন, এটা কোনও ছোটখাটো সংঘাত নয়, দেশে সরকার বদলের পর দ্রুজদের নির্মূল করতে উঠেপড়ে লেগেছে নিরাপত্তাবাহিনী। বেছে বেছে বৃদ্ধ, মহিলা ও শিশুদের হত্যা করা হচ্ছে। পরিস্থিতি অত্যন্ত ভয়াবহ। জোর করে দ্রুজ যুবকদের ধর্মান্তরিত করা হচ্ছে। দ্রুজ পুরুষদের রাস্তায় সারিবদ্ধভাবে দাঁড় করিয়ে গুলি করে হত্যা করা হচ্ছে। এমন একাধিক ভিডিও সোশাল মিডিয়াতেও সামনে এসেছে।

মার্কিন পর্যবেক্ষণ সংস্থা ‘সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটস’-এর এক রিপোর্টে দাবি করা হয়েছে, গত সপ্তাহে সুওয়াদাত প্রদেশে ৯৪০ জনেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছে। নিহতদের মধ্যে রয়েছেন ৩২৬ জন দ্রুজ যোদ্ধা, ২৬২ জন ড্রুজ বেসামরিক নাগরিক, ৩১২ জন সরকারি নিরাপত্তা কর্মী এবং ২১ জন সুন্নি বেদুইন, এদের মধ্যে তিনজন বেসামরিক নাগরিক রয়েছে যাদেরকে দ্রুজরা হত্যা করেছে বলে অভিযোগ। এই সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সংগঠনকে বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন হিসেবে দাগিয়ে দিয়েছে সিরিয়ার বর্তমান শাসক। ভয়াবহ এই পরিস্থিতির মাঝেই গত সপ্তাহ থেকে সিরিয়ার দক্ষিণ প্রদেশে হামলা চালিয়েছে ইজরায়েল। স্পষ্টভাবে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, দ্রুজ গণহত্যা রুখতেই এই হামলা। ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু দ্রুজ নাগরিকদের পক্ষ নিয়ে জানান, “আমরা দক্ষিণ সিরিয়ার সম্পূর্ণরূপে হিংসামুক্ত করার দাবি জানাই। দক্ষিণ সিরিয়ার দ্রুজ সম্প্রদায়ের জন্য কোনও হামলা সহ্য করব না।” এদিকে দ্রুজ, বেদুইন সুন্নিদের অস্ত্র সংবরণের আর্জি জানিয়েছে আমেরিকা। তাদের মধ্যস্ততায় সিরিয়া ও ইজরায়েলের মধ্যে সংঘর্ষবিরতির হয়েছে বলে জানানো হয়েছে। যদিও সিরিয়ার আভ্যন্তরীণ পরিস্থিতিতে এখনও কোনও বদল আসেনি।

কিন্তু কারা এই দ্রুজ?
জানা যায়, দ্রুজদের শিকড় ইসলামের সঙ্গে যুক্ত হলেও, এই সম্প্রদায়ের মানুষ মুসলিমদের থেকে নিজেদের আলাদা মনে করেন। শিয়া সম্প্রদায় থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার পর একাদশ শতাব্দীতে দ্রুজ সম্প্রদায়ের উদ্ভব হয়। দ্রুজ সম্প্রদায়ের লোকেরাও আব্রাহামিক ধর্মের একটি অংশ। এরাও মুসলিমদের মতো একেশ্বরবাদী। অর্থাৎ তারা বিশ্বাস করে যে একমাত্র ঈশ্বর আছেন। তবে তাদের কিছু বিশ্বাস ইসলাম থেকে আলাদা। উদাহরণস্বরূপ, দ্রুজ সম্প্রদায়ের লোকেরা পুনর্জন্মে বিশ্বাস করেন। এর পাশাপাশি, তারা ভাগ্যেও বিশ্বাস রাখেন। দ্রুজ সম্প্রদায়ের লোকেদের মাতৃভাষা আরবি। এদের বাস মূলত সিরিয়া। পাশাপাশি লেবানন, ইজরায়েল ও জর্ডানেও এদের বাস। প্রায় ৫ লক্ষ দ্রুজের বাস সিরিয়ায়। যেহেতু এরা আব্রাহামিক ধর্মাবলম্বী এবং ইসলামে বিশ্বাস রাখেন না তা ইহুদিরা এদের আপনজন বলে মনে করে। এদের ধর্মীয় রীতি অনুযায়ী ধর্মান্তরের অনুমোদন নেই। ইজরায়েলের সেনাবাহিনীতেও প্রচুর সংখ্যায় দ্রুজ রয়েছেন। মুসলিম চরমপন্থার শিকার এই সম্প্রদায়ের পাশে বরাবর দাঁড়িয়েছে ইহুদিরা।

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement