নেপালের সংসদ ভবনের ছাদে প্রতিবাদীরা।
সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল: ২০২২ সালে শ্রীলঙ্কায় গণঅভ্যুত্থানে রাষ্ট্রপ্রধানের বাসভবনে ঢুকে পড়েছিল বিক্ষোভকারীরা, গত বছর ‘জুলাই বিপ্লবে’ বাংলাদেশেও একই ঘটনা ঘটে। পতন হয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। এবার কি নেপালের কেপি শর্মা ওলি সরকারের পালা? শ্রীলঙ্কা-বাংলাদেশের মতোই সেখানেও সংসদ ভবনে ঢুকে পড়ল তরুণ তুর্কী আন্দোলনকারীরা। দেশের সর্বোচ্চ প্রশাসনিক ভবন ঢুকে ভাঙচুর চালায় ক্ষুব্ধ জনতা। ভবনে আগুন এবং ধোঁয়াও দেখা গিয়েছে। এছাড়াও বহু প্রতিবাদীকে কাচের দরজা-জানলা লক্ষ্য করে ইট-পাথর ছুড়তে দেখা গিয়েছে। সংসদ ভবনের কারিডর থেকে ছাদ, সবই এখন বিদ্রোহীদের দখলে। দেখা নেই নিরাপত্তারক্ষীদের। সূত্রের খবর, সংসদ ভবনে হামলার জেরে বহু গুরুত্বপূর্ণ সরকারি নথি নষ্ট হয়েছে।
নেপালের কেপি শর্মা ওলি সরকারের বিরুদ্ধে দুর্নীতি-সহ একাধিক অভিযোগ ছিলই। সম্প্রতি সেদেশে ফেসবুক, ইউটিউব, এক্স-সহ প্রায় সব ধরনের সোশাল মিডিয়া নিষিদ্ধ হওয়ায় আগুনে ঘি পড়েছে। প্রতিবাদ আন্দোলনে নেমেছে সেদেশের তরুণ প্রজন্ম। রাস্তায় নেমে কেপি শর্মা ওলি সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ দেখাচ্ছে তাঁরা। এমনকী একদল উত্তেজিত জনতা সংসদ ভবনের ভিতরে ঢুকে পড়েছে। বিক্ষোভকারীদের হটাতে লাঠিচার্জ করে পুলিশ। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে কাঠমান্ডুতে কারফিউ জারি করেছে প্রশাসন। এরপরেও বিক্ষোভ অব্যাহত থাকায় নেমেছে সেনা। নিরাপত্তারক্ষীদের গুলিতে মৃত্যু হয়েছে অন্তত ২০ জন প্রতিবাদীর। জখম ২৫০।
| Nepal | Protestors vandalise the Parliament gate as the protest turned violent in Kathmandu, as people staged a massive protest against the ban on Facebook, Instagram, WhatsApp and other social media sites, leading to clashes between police and protesters
— ANI (@ANI)
সংসদ ভবনে বিদ্রোহীদের হামলার পর একাধিক সরকারি ভবনে নিরাপত্তা বাড়িয়েছে প্রশাসন। তার মধ্যে রয়েছে রাষ্ট্রপতির বাসভবন (শীতল নিবাস), লেইনচৌরে উপরাষ্ট্রপতির বাসভবন, বালুওয়াটারের প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা ওলির বাসভবন ইত্যাদি। কাঠমান্ডু প্রশাসন জানিয়েছে, দুপুর সাড়ে বারোটা থেকে রাত দশটা অবধি কারফিউ জারি হয়েছে শহরে। যদিও কারফিউ উপেক্ষা করে পথে নেমে বিক্ষোভ দেখাচ্ছে বিক্ষোভকারীরা।
২০২২ সালে শ্রীলঙ্কায় সরকার বিরোধী বিক্ষোভ দানা বাঁধে। সেই সময় অর্থনৈতিক অব্যবস্থা তৎসহ তীব্র মুদ্রাস্ফীতির কারণে একাধিক নাগরিক সঙ্কট দেখা দিয়েছিল দ্বীপরাষ্ট্রে। তার মধ্যে ছিল বিদ্যুৎবিভ্রাট, জ্বালানি তেল এবং নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের ঘাটতি ইত্যাদি। ওই গণঅভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত হয় গোঠাভয় রাজাপক্ষ সরকার। অন্যদিকে গত বছর (২০২৪ সালে) জুলাই মাসে বাংলাদেশে ছাত্র আন্দোলনে ক্ষমতা হারায় শেখা হাসিনা পরিচালিত আওয়ামি লিগ সরকার। পদ্মাপাড়ে আন্দোলনের নেপথ্যে ছিল সরকারি চাকরিতে কোটা। বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, এবার তেমন ঘটনা নেপালে ঘটলেও অবাক হওয়ার কিছু নেই। কারণ দুর্নীতি-সহ একাধিক অভিযোগ রয়েছে কেপি শর্মা ওলি সরকারের বিরুদ্ধে। কৌশলে সোশাল মিডিয়া নিষিদ্ধ করে বিদ্রোহ দমনের চেষ্টা করে করেছিল প্রশাসন। তাতেই আগুনে ঘি পড়েছে। শুরু হয়েছে বিক্ষোভ।
প্রসঙ্গত, নেপালে নিষিদ্ধ সোশাল মিডিয়ার তালিকায় রয়েছে ফেসবুক, ইউটিউব, ইনস্টাগ্রাম, এক্স, লিঙ্কডইন, রেডিট, হোয়াটসঅ্যাপ, স্ন্যাপচ্যাট ইত্যাদি রয়েছে। নেপালের সুপ্রিম কোর্ট জানিয়ে দিয়েছে, সমস্ত দেশীয় ও বিদেশি অনলাইন প্ল্যাটফর্মগুলিকে আগে সরকারের সঙ্গে নথিবদ্ধ হতে হবে। যাতে সমস্ত ‘অবাঞ্ছিত’ কনটেন্টে নজরদারি চালানো যায় উল্লেখ্য, সোশাল মিডিয়া নিয়ে সমস্যা নেপালে নতুন নয়। ২০২০ সাল থেকে বহু পিটিশন জমা পড়েছে লাইসেন্সহীন প্ল্যাটফর্মে বিজ্ঞাপন ও কনটেন্ট প্রচার করার অভিযোগে। অবশেষে পদক্ষেপ করল প্রশাসন। তবে সব সোশাল মিডিয়াই যে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে তা নয়। টিকটক, ভাইবার, উইটক, নিমবুজ, টেলিগ্রাম ও গ্লোবাল ডায়রিকে নিষিদ্ধ করা হয়নি।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
নিয়মিত খবরে থাকতে ফলো করুন
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.