জ্বলছে নেপাল, মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রী ওলির ছবি পোড়াল বিদ্রোহীরা। ছবি: পিটিআই
সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: জনকণ্ঠ রোধে সোশাল মিডিয়ায় নিষেধাজ্ঞার অভিযোগে সোমবার সকালে তরুণ তুর্কিদের যে আন্দোলন শুরু হয়েছিল নেপালে (Nepal Violence), রাতের মধ্যে তা হিংসাত্মক চেহারা নেয়। পুলিশ-সেনার প্রতিরোধেও কাজ হয়নি। বিপ্লবের বলি হয় ২১ জন। আহত তিনশোর বেশি। এই অবস্থায় সোমবার গভীর রাতে সোশাল মিডিয়ায় নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয় সরকার। তারপরেও আন্দোলন থামেনি। জনতার দাবি ছিল প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা ওলির (KP Sharma Oli) পদত্যাগ। শেষ পর্যন্ত পদত্যাগ করতে বাধ্য হন তিনি। প্রশ্ন উঠছে, শুধুই কী সোশাল মিডিয়ায় নিষেধাজ্ঞার জেরে এত বড় আন্দোলন? নাকি নেপথ্যে অন্য কারণ রয়েছে। উত্তর পেতে জানতে হবে সদ্য প্রাক্তন নেপালের প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা ওলির রাজনৈতিক উত্থান। উত্থানের মধ্যেই হয়তো ছিল পতনের বীজ!
৭৩ বছরের ওলি নেপালের প্রবীণ বামপন্থী নেতা। তাঁর দীর্ঘ রাজনৈতিক কেরিয়ারের সঙ্গী অস্থিরতা। তাঁর বিরুদ্ধে ক্ষমতা ধরে রাখার জন্য় অসৎ উপায় নেওয়ারও অভিযোগ উঠেছে। উগ্র জাতীয়তাবাদ, চিনপন্থী এবং ভারত বিরোধিতার জন্যও নেপালের রাজনীতিতে পরিচিত ওলি। প্রথম দফায় ২০১৫-২০১৬ এবং পরবর্তী পর্যায়ে ২০১৮-২০২১ সালে নেপালের প্রধানমন্ত্রী হন এই বামপন্থী নেতা। দ্বিতীয় পর্বে নেপাল সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে ক্ষমতাচ্যুত হন তিনি। তাঁর বিরুদ্ধে অসাংবিধানিক উপায়ে ক্ষমতা দখলের অভিযোগ উঠেছিল। নেপাল গত ১৭ বছরে ১৪ বার সরকার বদলের সাক্ষী হয়েছে। এমন রাজনৈতিক ডামাডোলে অর্থনীতি থেকে সামগ্রিক নাগরিক পরিষেবার অবনতি হয়েছে। এর জন্য ওলিকেও দায়ী করা যেতে পারে।
১৯৫২ সালে জন্ম কেপি শর্মা ওলির। স্কুলছুট। ২২ বছর বয়সে কৃষকহত্যার অভিযোগে জেল যান। কিশোর বয়সে বাম নেতা রামনাথ দাহালের সংস্পর্শে বামপন্থী রাজনীতিতে হাতেখড়ি। ১৯৭০ সালে আঠারো বছর বয়সে নেপালের বাম দলের সদস্য হন। এরপর ১৪ বছর জেলবন্দি ছিলেন। গত শতাব্দীর আটের দশকের মাঝামাঝি সময়ে জেলমুক্ত হন তিনি। ঘনিষ্ঠজনদের ওলি বহুবার জানিয়েছেন, বন্দিজীবন তাঁকে রাজনীতি সম্পর্কে অভিজ্ঞ করেছিল। ১৯৭১ সালে ঝাপা বিদ্রোহের নেতৃত্ব দেন ওলি। ঝাপা বিদ্রোহ নেপালের বামপন্থী আন্দোলন বড় বাঁকবদল। এই সময় পাহাড়ের দেশ সশস্ত্র বিদ্রোহের সাক্ষী হয়। হত্যাকাণ্ড ছিল নিত্য দিনের ঘটনা।
১৯৯০ সাল থেকে নেপালি রাজনীতির মূলস্রোতে জনপ্রিয় নেতা হয়ে ওঠেন ওলি। পরবর্তী কয়েক বছরে নেপালে বাম রাজনীতির অন্যতম মুখ হয়ে ওঠেন তিনি। ২০১৫ সালে ৫৯৭টির মধ্যে ৩৩৮ ভোট পেয়ে প্রথমবার নেপালের প্রধানমন্ত্রী হন কেপি শর্মা ওলি। যদিও বছর খানেকের মধ্যে ক্ষমতা হারাতে হয় তাঁকে, যখন কমিউনিস্ট পার্টি অফ নেপাল (মাওপন্থী-কেন্দ্র) সমর্থন সরিয়ে নেয়। এরপর পুষ্প কমল দাহাল প্রচন্ডের নেতৃত্বে জোট বাঁধে নির্বাচনে লড়ে নেপাল ইউনিফায়েড মার্কসিস্ট লেনিনিস্ট (ইউএমএল) পার্টি এবং কমিউনিস্ট পার্টি অফ নেপাল (মাওপন্থী-কেন্দ্র)। ক্ষমতায় আসে বামপন্থীরা। ওলি আর প্রচন্ডর মধ্যে প্রধানমন্ত্রিত্ব ভাগাভাগি। প্রথম দফায় ২০১৮ সালে দ্বিতীয়বার প্রধানমন্ত্রী হন ওলি। ‘সমৃদ্ধ নেপাল, সুখি নেপালে’র প্রতিশ্রুতি দেন তিনি।
যদিও জনতার দাবি, নেপালের মানুষকে ‘সুখি’ করতে পারেননি ওলি। উলটে তাঁর বিরুদ্ধে স্বৈরাচারের অভিযোগ ওঠে। তদন্তকারী সংস্থাগুলিকে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অধীনে আনেন তিনি। এই পর্বে ক্ষমতা ভাগাভাগি নিয়ে প্রচণ্ডের সঙ্গে দ্বন্দ্ব হয় ওলির। এরপর ২০২১ সালে ক্ষমতা হারান তিনি। অসাংবিধানিক উপায়ে ক্ষমতা দখলের অভিযোগে নেপাল সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে ক্ষমতাচ্যুত হন কেপি শর্মা ওলি। কৌশলী রাজনৈতিক চালে ২০২৪ সালের জুলাই মাসে ক্ষমতায় ফেরেন ওলি। এর জন্য এককালের বন্ধু পুষ্প কমল দহল ‘প্রচণ্ড’ কে ত্যাগ করেন তিনি। অন্যদিকে শত্রু থেকে বন্ধু হয়ে ওঠা শের বাহাদুর দেউবার সঙ্গে হাত মেলান। যিনি নেপালি সংসদের বৃহত্তম দল নেপালি কংগ্রেসের শীর্ষ নেতা। যদিও বছর খানেকের মধ্যেই ক্ষমতা হারাতে হল। ছাত্র-যুবদের আন্দোলনে দেশ ছাড়তে বাধ্য হলেন এক সময় নেপালের সর্বোচ্চ ক্ষমতাধারী কেপি শর্মা ওলি।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
নিয়মিত খবরে থাকতে ফলো করুন
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.