সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: নেপালে ‘জেন জি’ আন্দোলন গণবিপ্লবের চেহারা নিয়েছে। গদি ছেড়েছেন বামপন্থী শাসক কেপি শর্মা ওলি। অরাজক দেশের শাসনভার এখন সেনার হাতে। আগুন, ধ্বংস আর হিংসা কি থামবে এবার? তারচেয়ে বড় প্রশ্ন, রাজনৈতিক ভাবে কোন পথে হাঁটবে নেপাল? ফের রাজতন্ত্র ফিরবে নাকি শাসক বদলে গণতন্ত্রই বহাল থাকবে? কী ইঙ্গিত করলেন সেনাপ্রধান?
‘জেন জি’ বিপ্লবের প্রথম দিনেই আন্দোলনকারীরা স্লোগান দিয়েছিলেন—‘রাজা আউনপার্চা’ অর্থাৎ রাজা ফিরে আসবেই। ওই দিন হাজার হাজার বিক্ষোভকারীরা নেপালের রাজতন্ত্রের আমলের পুরনো পতকার নিচে জরো হয়েছিলেন। যদিও রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের একাংশের বক্তব্য, একদিকে যখন গণতান্ত্রিক অধিকারের দাবিতে আন্দোলন চলছে, যখন সোশাল মিডিয়া নিষিদ্ধ করে বাক স্বাধীনতা হরণের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ দেখাচ্ছে তরুণ প্রজন্ম, তখন রাজতন্ত্র ফেরানোর দাবি তো পিছু হটা, তথা হাস্যকর। তাহলে কি পরিবর্তনই একমাত্র লক্ষ্য ছিল বর্তমান শাসকের প্রতি বীতশ্রদ্ধ আমজনতার?
একটানা দু’বছর বিক্ষোভ আন্দোলনের পর ২০০৮ সালে নেপালের ২৪০ বছরের পুরনো শাহ রাজবংশের সূর্য অস্তমিত হয়। যার সূত্রপাত ২০০১ সালের ১ জুন। এক রাতে শেষ হয়ে গিয়েছিল রাজা-রানি-সহ প্রায় গোটা একটা রাজপরিবার! ২৪ বছর পরও সেই রহস্যের কিনারা হয়নি। এলোপাথাড়ি বুলেটে ঝাঁঝরা হয়ে প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন নেপালের রাজা বীরেন্দ্র। তার পর একে একে তাঁর পরিবারের অধিকাংশ সদস্য— স্ত্রী, পুত্র, কন্যা, ভাই, বোন, বোনের স্বামী, সবাইকে হত্যা করা হয়। রাজপুরী মুহূর্তে বদলে যায় মৃত্যুপুরীতে। নেপালের সরকারি তথ্য বলছে, রাজপ্রাসাদে সে দিন গুলি চালিয়েছিলেন নেপালের সেই সময়ের যুবরাজ, তৎকালীন রাজা বীরেন্দ্রের বড় ছেলে দীপেন্দ্র। তিনি নিজেও গুলিবিদ্ধ হয়ে কোমায় চলে যান। পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয় তাঁর।
এরপর নতুন রাজা হন দীপেন্দ্রের কাকা জ্ঞানেন্দ্র। আসলে দীপেন্দ্রর আড়ালে জ্ঞানেন্দ্রই কী ষড়যন্ত্র করেছিলেন? এর পরই অবশ্য শুরু হয় রাজপরিবারের বিরুদ্ধে নেপালের জনগণের বিক্ষোভ। সেটাই রাজতন্ত্রের শেষের শুরু। একদা নেপালের রাজবাড়ির সদস্যদের ‘দেবতার দূত’ ভাবা নেপালের জনতা রাজপরিবারকে ১৫ দিন সময় দেয় রাজপ্রাসাদ ছেড়ে চলে যাওয়ার জন্য। ২০০৮ সালে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে পরিণত হয় নেপাল। ক্ষমতা দখল করেন বামপন্থী কুখ্যাত নেতা প্রচণ্ড। এরপরেও হিমালয়ের দেশে রাজনৈতিক টানাপোড়েন থামেনি। নানা কারণে ক্ষমতার হাতবদল হয়েছে। দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে শাসক দলের নেতা-মন্ত্রীদের বিরুদ্ধে। তারই ফল পুঞ্জিভূত ক্ষোভ। ফলস্বরূপ গণবিপ্লবে কেপি ওলি শর্মার পতন। দেশটির অভিভাবক এখন সেনা। সেই সেনাপ্রধান ইঙ্গিতবাহী বার্তা দিয়েছেন।
নেপালের সেনা প্রধান অশোক রাজ সিদগেল জানিয়েছেন, আপাতত দেশের শান্তি-শৃঙ্খলার দায়িত্ব নিচ্ছে বাহিনী। এরই সঙ্গে তিনি নীরবেই যেন রাজতন্ত্র ফেরার বার্তা দিয়ে গেলেন দেশবাসীকে। গতকাল জাতির উদ্দেশে যখন নেপালের সেনা প্রধান ভাষণ দিচ্ছেন, তখন তাঁর পিছনে ছিল নেপালের পতাকা। এবং নেপালের প্রথম রাজা পৃথ্বীনারায়ণ শাহের মূর্তির ছবি। আর তা থেকেই অনেকে ধারণ করছে, নেপালে রাজতন্ত্র ফিরিয়ে আনার বার্তাই নীরবে দেওয়ার চেষ্টা করলেন সেনা প্রধান অশোক রাজ সিদগেল। যদিও এর মধ্যেই দেশটির অন্তর্বতী নেতা হিসাবে প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি সুশীলা কারকিকে বেছে নিয়েছে ‘জেন জি’। তিনিই প্রধানমন্ত্রী হচ্ছেন? এর জন্য সেনার অনুমতি লাগবে। সেনা অনুমতি দেবে তো? সময়েই উত্তর জানে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
নিয়মিত খবরে থাকতে ফলো করুন
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.