সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: দীর্ঘ পাঁচদিন ধরে পাক অধিকৃত কাশ্মীরে গণবিক্ষোভ চলার পর অবশেষে নতিস্বীকার করল শাহবাজ শরিফের সরকার। শনিবার আন্দোলনকারীদের সঙ্গে স্বাক্ষরিত হল ‘শান্তি চুক্তি’। জানা গিয়েছে, আন্দোলনকারীরা যে দাবিগুলি জানিয়েছিলেন, তার বেশিরভাগই মেনে নিয়েছে পাক সরকার।
বুধবার শাহবাজ সরকারের তরফে একটি প্রতিনিধি দল আন্দোলনকারীদের সঙ্গে দেখা করে। ওই প্রতিনিধি দলের নেতৃত্বে ছিলেন পাকিস্তানের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী রাজা পারভেজ আশরাফ। টানা দু’দিন আলোচনার পর অবশেষে শনিবার স্বাক্ষরিত হয় এই ‘শান্তি চুক্তি’। জানা গিয়েছে, আন্দোলনকারীদের ৩৮ দফা দাবির মধ্যে ২১টি দাবিই মেনে নিয়েছে সরকার। এই চুক্তি অনুযায়ী, বিক্ষোভের জেরে যারা প্রাণ হারিয়েছেন, তাঁদের পরিবারকে আর্থিক সাহায্য করবে সরকার। পাশাপাশি, যারা ভাঙচুর এবং হিংসায় উসকানি দিয়েছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাস দমন আইনে মামলা রুজু করে তদন্ত করা হবে। এই চুক্তির একটা বড় প্রভাব পড়েছে শিক্ষা ক্ষেত্রে। অধিকৃত কাশ্মীরের মুজফফরাবাদ এবং পুঞ্চ অঞ্চলে গড়ে উঠবে নতুন দুটি শিক্ষা বোর্ড। যেগুলি হল – ইন্টারমিডিয়েট এবং সেকেন্ডারি। শিক্ষার পাশাপাশি নজর দেওয়া হয়েছে স্বাস্থ্য ক্ষেত্রেও। আগামী ১৫ দিনের মধ্যে অধিকৃত কাশ্মীরে ফ্রি হেলথ কার্ড প্রকল্প চালু করা হবে। প্রতিটি জেলায় স্থাপন করা হবে সিটি স্ক্যান এবং এমআরআই যন্ত্র। অন্যদিকে, অধিকৃত কাশ্মীরে বিদ্যুৎ পরিষেবার উন্নতির জন্য ১ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ করেছে শাহবাজ সরকার। এগুলি ছাড়াও গোটা অঞ্চলের সামগ্রিক পরিকাঠামোর উন্নতির জন্য একাধিক ব্যবস্থা গ্রহণ করার কথা বলেছে পাক সরকার।
পাক সরকারের বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন ধরেই ক্ষোভে ফুঁসছে অধিকৃত কাশ্মীর। অভিযোগ ছিল, গোটা অঞ্চলে স্বাস্থ্য, শিক্ষা, পরিকাঠামো ও পানীয় জলের অভাব গুরুতর। বারবার দাবি জানানো হলেও সরকারের তরফে কোনও পদক্ষেপ করা হয়নি। সরকারি কাজে অবহেলা, দুর্নীতি, ঘুষ মাত্রাছাড়া আকার নিয়েছে। এর বিরুদ্ধে সমগ্র অধিকৃত কাশ্মীর জুড়ে ধর্মঘটের ডাক দিয়েছিলেন নীলম ভ্যালি পাবলিক অ্যাকশন কমিটির মুখপাত্র তথা অধিকৃত কাশ্মীরের বিক্ষুব্ধ নেতা শওকত নওয়াজ মির। তিনি বলেন, “ধৈর্যের সীমা অতিক্রম করেছে। সরকার যদি এভাবে জনগণকে অবহেলা করে তবে তার প্রতিক্রিয়া তো আসবেই। অন্যদিকে প্রশাসনের তরফে হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে কোনওরকম ধর্মঘট বরদাস্ত করা হবে না।”
মিরের ডাকে সাড়া দিয়ে গত সোমবার হাজার হাজার মানুষ ব্যানার হাতে নিয়ে পথে নামেন। পুরো অঞ্চল জুড়ে ‘শাটার ডাউন ও চাক্কা জ্যাম’ করা হয়। এই পরই সেই বিক্ষোভ দমন করতে মাঠে নামে পাক সেনা ও আইএসআই সমর্থিত মুসলিম কনফারেন্সের সশস্ত্র দুষ্কৃতীরা। তাতেই পাল্লা দিয়ে বাড়ে মৃত্যুমিছিল। অবশেষে আন্দোলনকারীদের কাছে নতিস্বীকার করে ‘শান্তি চুক্তি’ স্বাক্ষর করতে রাজি হল পাক সরকার। প্রসঙ্গত, ২০২৪ সালে ঠিক একইরকম আন্দোলনে ফুঁসে উঠেছিলেন অধিকৃত কাশ্মীরের জনতা।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
নিয়মিত খবরে থাকতে ফলো করুন
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.