সোমা কর্মকার, হেলসিংবার্গ, দক্ষিণ সুইডেন: শরতের হিমেল হাওয়ায় কাশফুলের দোলায় ভেসে আসে মায়ের আগমনের বার্তা। ন’বছরের ঐতিহ্য বয়ে ‘বেঙ্গলি কালচারাল সোসাইটি অফ সাউথ সুইডেন’-এর দুর্গোৎসব আজ দক্ষিণ সুইডেনের অন্যতম বৃহৎ সাংস্কৃতিক মিলনক্ষেত্র।
এই নবম বর্ষে থিম ‘শান্তিরূপেণ সংস্থিতা’-মা দুর্গার সেই রূপ, যিনি শান্তির অবতার। শান্তি, যার অর্থ সর্বশ্রেষ্ঠ শক্তি, সভ্যতার ভিত্তি। আজ যখন বিশ্বজুড়ে যুদ্ধের দামামা, প্রাকৃতিক বিপর্যয় আর সমাজের বিভাজন, তখন আমাদের মনে পড়ে সেই শুভ শক্তির কথা- যিনি শান্তির প্রতীক হয়েও অন্যায়ের বিরুদ্ধে মহাযোদ্ধা রূপে আবির্ভূত হন। তিনিই দেবী, যার উপস্থিতি আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে, প্রকৃত শান্তি প্রতিষ্ঠিত হয় ন্যায়ের জয়ের মাধ্যমে।
তবে, কলকাতার সঙ্গে একটা বিষয়ে কিন্তু আমাদের পার্থক্য আছে। আমাদের পুজো হবে ২৭ থেকে ২৯ সেপ্টেম্বর। অর্থাৎ, শনি থেকে সোম। তিন দিন। সোমবার মানে ২৯ তারিখ আমাদের দশমী। সিঁদুরখেলা ও দেবীবরণ। অর্থাৎ কলকাতায় সপ্তমীর দিনই আমাদের এখানে দশমী। আমাদের পূজামণ্ডপে সেই ভাবনাকেই রূপ দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে। এ বছর থিম আলপনা, যেখানে শান্তির প্রতীক হিসাবে আঁকা হবে ওঁ, পদ্মফুল, শঙ্খ ও ময়ূর মোটিফ। আলো ও রঙের ছোঁয়ায় মণ্ডপ রূপ নেবে এক শান্তি ও সৃজনশীলতার প্রতীকী অভয়ারণ্যের। উল্লেখযোগ্য বিষয়, টানা চতুর্থ বছরে আমাদের পূজা পরিচালনা করবেন নারী পুরোহিতরা, যা বহন করে সমতার বার্তা।
প্রতি বছরের মতো এবছরও আচারানুষ্ঠানের পূর্ণতা থাকবে- নবপত্রিকা স্নান, সপ্তমী, অষ্টমী, নবমী ও দশমীর পূজা, সন্ধিপুজো, যজ্ঞ, পুষ্পাঞ্জলি ও বিজয়া। শিশু থেকে প্রবীণ- সকলে ভাগ নেবে এই পূজা আয়োজনের প্রতিটি ধাপে। ভোগের আয়োজন এ বছরও অন্যতম আকর্ষণ। সপ্তমীতে পরিবেশিত হবে খিচুড়ি, লাবড়া, চাটনি ও মিষ্টি, অষ্টমীতে মরিচ লুচি, কলকাতা স্টাইল আলুর তরকারি ও বোঁদে। নবমী-দশমীতে পরিবেশিত হবে নিরামিষ ও আমিষ-খাঁটি বাঙালি স্বাদের ভোজ। প্রতিবারের মতো লাইভ রান্নাঘরে প্রবাসী বাঙালি ও অবাঙালি বন্ধুরা মিলেমিশে তৈরি করবে ভোগ, ভাগ করবে আনন্দ। আর দশমীর রাতে আনন্দমেলায় হোম শেফদের পরিবেশনায় হাজির থাকবে নানারকম পদ-রূপ নেবে এক বর্ণময় খাদ্যমেলা।
প্রতিদিন সন্ধ্যায় থাকছে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, যেখানে ছোট থেকে বড় সকলে পরিবেশন করবে নৃত্য, গান, আবৃত্তি ও ধুনুচি নাচ। বিজয়ার দিনে থাকবে দেবীবরণ ও সিঁদুরখেলা- যেখানে বাঙালির সঙ্গে যোগ দেবেন অবাঙালি ও স্থানীয় সুইডিশরাও।
এভাবেই ভক্তি, আনন্দ, ভোগ ও সংস্কৃতির আবহে তিনদিন ভরে উঠবে বেঙ্গলি কালচারাল সোসাইটি অফ সাউথ সুইডেনের নবম দুর্গোৎসব। পুজো শেষে থেকে যাবে এক অমূল্য বার্তা- যুদ্ধ নয়, শান্তি চাই; বিভাজন নয়, সহাবস্থান চাই। মা দুর্গার আশীর্বাদে ‘শান্তিরূপেণ সংস্থিতা’ হোক আমাদের ভবিষ্যতের পাথেয়।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
নিয়মিত খবরে থাকতে ফলো করুন
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.