শৈবাল গিরি, মিউনিখ: বাঙালির কাছে কি ‘ভক্সফেস্ট’ শব্দটা খুব পরিচিত? সম্ভবত না। জার্মানির মিউনিখ শহরে থাকার সূত্রে অবশ্য শব্দটা খুব চেনা। তবু অনেকে হয়তো ‘অক্টোবরফেস্ট’-এর নাম শুনে থাকবেন। কিন্তু তার সঙ্গে দুর্গাপুজোর কী সম্পর্ক? না, কোনও সম্পর্ক নেই। কিন্তু এবারের শারদীয় মরশুমের এক বিশেষত্ব আছে, যা কেবল মিউনিখেই সম্ভব। অক্টোবরফেস্ট আর দুর্গাপূজার যোগসূত্র এক– মানবীয় মেলবন্ধনের অনন্য মহোৎসব।
এক সময়ে একই শহরে পৃথিবীর দুটি সর্ববৃহৎ উৎসবের উদযাপন মিউনিখে। সেদিক দিয়ে এবারের শারদ-সম্প্রীতি এক অনন্য ইতিহাসের সাক্ষী হতে চলেছে। সেই গল্প জানতে হলে পিছিয়ে যেতে হবে দুশো পনেরো বছর। সেপ্টেম্বরের শেষের দিকে বাভারিয়ার রাজা প্রথম লুডউইগ যিনি আজ থেকে প্রায় সোয়া দুশো বছর আগে বিবাহ করেন থেরেসাকে। সেই বিয়েকে কেন্দ্র করে শুরু হয় একটি ঘোড়দৌড়। সেখান থেকেই সৃষ্টি এক বার্ষিক রীতির। তারই ফলে লক্ষ লক্ষ মানুষ দু’সপ্তাহ ধরে প্রতি বছর এসময়ে মিউনিখ আসেন। সারা পৃথিবী তাকে আজ অক্টোবরফেস্ট নামে চেনে।
জার্মানি তথা ইউরোপের অগ্রণী বাঙালি সংগঠন ‘সম্প্রীতি’র উদ্যোগে মিউনিখে দুর্গোৎসব এবার সপ্তম বর্ষে পা দেবে। মিউনিখ শহরের পূর্ব উপকণ্ঠে ঐতিহাসিক এক থিয়েটারে এবারের ‘শারদ-সম্প্রীতি’র আয়োজন। বাখ, বেঠোফেন, গ্যেটে, ব্রেখটের দেশে ঐতিহ্যবাহী এই রঙ্গমঞ্চে মায়ের আরাধনা এবং সেই সূত্রে নানাবিধ অনুষ্ঠানের সম্ভার নিয়ে তৈরি সম্প্রীতির পুজো কমিটি। তৈরি সদস্য থেকে শুরু করে কচিকাঁচারাও। ইউরোপের অনেক পুজোর থেকে আলাদা ‘সম্প্রীতি’র পুজো। বিশেষ দিন দেখে নয়, ‘শারদ-সম্প্রীতি’ তিথি ও নির্ঘণ্ট মেনে পুজো করার কঠোর নিয়মপন্থী। এবছরের পুজো শনিবার, পঞ্চমীর থেকেই শুরু। যদিও আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হবে বোধন, অর্থাৎ ষষ্ঠীতে। আর পঞ্জিকা মেনেই আনুষ্ঠানিক ইতি দশমীতেই।
অতিথি সমাগমে এবারের ‘শারদ-সম্প্রীতি’ বরাবরের চেয়ে বেশি ব্যস্ত হবে বলে মনে করা হচ্ছে। শহরের মেয়র আন্দ্রিয়াস বুকাওস্কি আসবেন উদ্বোধনে, সঙ্গে থাকবেন ভারতীয় কনসুলেট জেনারেল-সহ অন্যান্য আধিকারিকরা। আশা করা হচ্ছে, পরিবার-সহ নেতাজিকন্যা অনিতা পাফও আসবেন। দুর্গাপুজো বাঙালির শ্রেষ্ঠ উৎসব হলেও, তার সঙ্গে ভারতীয়ত্বও জড়িয়ে থাকে। আর মিউনিখেও প্রচুর অবাঙালি ভারতীয় আছেন। দেশবিদেশের অভ্যাগতদের কথা মাথায় রেখে ষষ্ঠীতে ডান্ডিয়ার আয়োজন হয়েছে। অন্যান্য দিন রয়েছে আনন্দমেলা, সঙ্গীতানুষ্ঠান, বড়-ছোটদের আলাদা আলাদা নাটক, নৃত্যানুষ্ঠান, আমন্ত্রিত শিল্পীদের সঙ্গীতানুষ্ঠান এবং অবশ্যই ভূরিভোজ।
পুজোর সব কটি দিন দু’বেলাই খাওয়াদাওয়ার আয়োজন করছেন সঞ্জীব নামের এক পাঞ্জাবি সদস্য়। তবে জন্মসূত্রে পাঞ্জাবি হলেও আদি নিবাস হাওড়ায়। এখন মিউনিখ শহরে নামকরা তিনটে রেস্তরাঁ চালান। মনেপ্রাণে বাঙালি। এবছরের মেনুতে কাতলা কালিয়া, আলুপোস্ত আর ঝুঝঝুরে আলুভাজা-সহ মুখরোচক বাঙালিয়ানা নিয়ে আসছেন পাতে পাতে। সব মিলিয়ে গরমের ছুটি কাটিয়ে জার্মানির মিউনিখও আসন্ন আশ্বিনের শারদপ্রাত একদম জমজমাট।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
নিয়মিত খবরে থাকতে ফলো করুন
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.