Advertisement
Advertisement

Breaking News

Probashe Durga Puja

আমেরিকাতেও কাশফুলে শরতের আগমনী! নিউ জার্সির পুজোয় বন্ধুদের সঙ্গে চলে প্যান্ডেল হপিং

পুজো শেষ হলেই মন বলে ওঠে, 'হ্যাপি হ্যালোউইন'।

Probashe Durga Puja: Experience of Durga Puja in New Jersey

ছবি: প্রতিবেদক

Published by: Arpan Das
  • Posted:September 13, 2025 4:38 pm
  • Updated:September 13, 2025 7:43 pm   

দেবলীনা দে, নিউ জার্সি: শরৎকাল নিউ জার্সিতে একেবারে অন্যরকম। দোকানে রংবেরঙের জামাকাপড়ের পসরা সাজানো নাই বা থাকল। কিন্তু গাছের পাতায় পাতায় লাল-কমলা-হলুদ রং বলে দেয়, পুজো আসছে। তবে আকাশের নীল দিগন্তে কিন্তু একই রকম ভেসে থাকা পেঁজা তুলোর মতো মেঘ; কোথাও উপরি পাওনা হাইওয়ের ধারে কাশফুলের সারি। সোশাল মিডিয়ায় পুজোর খবর, কেনাকাটা, খাওয়াদাওয়া- এসব দেখে বাঙালির হৃদয়ে বাজে পুজোর ঢাক। শহরের কোণে কোণে, স্কুল অডিটোরিয়াম থেকে শুরু করে কালচারাল সেন্টারের ভেতর যেন তৈরি হয় ছোট্ট একখণ্ড কলকাতা। শুরু হয় দুর্গোৎসবের আয়োজন। বাঙালি সব সময়ই হুল্লোড়ে ভাসতে ভালোবাসে। তাই তো দৈনন্দিন রাজনীতির কচকচানির ঊর্ধ্বে নিত্যনতুন আনন্দের জন্য ক’টা দিনের প্রস্তুতি শুরু হয়ে যায়।

Advertisement
ছবি প্রতিবেদক

এখানে যেমন আছে পঞ্জিকা মেনে মন্দিরে মন্দিরে দুর্গাপুজো। তেমনই আছে উইকেন্ডে পাড়ায় পাড়ায় ক্লাবের পুজো। সেই তালিকায় ৫০ বছরের পুরনো ক্লাব থেকে রয়েছে এমন ক্লাব যারা এবার প্রথম দুর্গাপুজো পালন করবে। মনে পড়ে দশ বছর আগে যখন এই দেশে পাড়ি জমিয়েছিলাম, তখন পুজো (Probashe Durga Puja) ছিল হাতেগোনা। এখন তা দাঁড়িয়েছে গোটা পঞ্চাশের কাছাকাছি ।

ছবি প্রতিবেদক

আসলে বাঙালি সব পারে! বিকেলবেলায় হাঁটতে বেরিয়ে দশজন বাঙালি মিলে আলোচনা করে উদ্যোগ নিয়ে আয়োজন করে ফেলে এক নতুন দুর্গাপুজোর। তালিকায় বাড়ে আরেকটা নাম। পুজোর প্ল্যানিং চলতে থাকে চরম উদ্যমে। কুমোরটুলি থেকে জাহাজে করে নতুন প্রতিমা আনা হয়। পুজোর সরঞ্জাম, পুরোহিত, হল ভাড়া নেওয়া, রেজিস্ট্রেশন, অনুষ্ঠানসূচি, পুজোর খাবারের মেনু, নামকরা আর্টিস্টদের অনুষ্ঠান, আর সবশেষে প্যাকিং করে ঠাকুর তুলে রাখা- পুজো সম্পূর্ণ।

ছবি প্রতিবেদক

সেই যেমন আমরা ছোটবেলায় পাড়ায় পাড়ায় নাটকের বা নাচের মহড়া দিতাম, সেই রকম অতি উদ্যমে চলতে থাকে প্রস্তুতি। বাচ্চা থেকে বড় সবাই মিলে চলে নাচে গানে নাটকের চর্চা। পুজোর আগের মাস থেকে প্রতি সপ্তাহান্তে কারও কারও বাড়িতে চলতে থাকে আয়োজন। সমস্ত পরিকল্পনা বাস্তবায়িত করার আলোচনার সঙ্গে চলতে থাকে পটলাকের খাবারদাবার আর ফ্লাস্কের গরম চা। হোম ডিপো থেকে আনা কাঠ, কখনও বা থার্মোকল দিয়ে চলতে থাকে মণ্ডপসজ্জা। শিউলির গন্ধ ভেসে না এলেও সেপ্টেম্বর-অক্টোবর আসা মানেই নিউ জার্সির আকাশে এক অদ্ভুত সুর বেজে ওঠে।

ছবি প্রতিবেদক

ব্যস্ত স্কুল, অফিস, গাড়ি, রাস্তাঘাট এসবের মাঝেই প্রবাসী বাঙালির হৃদয়ে এক অদৃশ্য তুলির টানে তৈরি হয় মণ্ডপ। যেখানে মায়ের প্রতিমা দাঁড়িয়ে থাকে অপরূপ রূপে। তাই এখানে পুজো শুরু হয়ে যায় মহালয়ার আগে থেকে। চলতে থাকে দীপাবলি পর্যন্ত। এতগুলো ক্লাবের পুজো, কিন্তু উইকেন্ড তো হাতে গোনা। তাই নির্দিষ্ট কিছু ক্লাব নির্দিষ্ট সপ্তাহান্ত বেছে নেয়। যাতে কারও আনন্দে ঘাটতি না পড়ে, যাতে সবাই উপভোগ করতে পারে। এখন তো রীতিমতো চলতে থাকে প্যান্ডেল হপিং! বন্ধুরা মিলে ঠিক করে এ বছরের পুজোতে কোন ক্লাবে যোগ দেবে। স্মৃতিতে থাকে ছোটবেলার বন্ধুদের সঙ্গে ঘুরে বেড়ানোর নস্ট্যালজিয়া।

পুজোর ক’টা দিন চরম ব্যস্ততা থাকে আয়োজকদের। সকাল শুরু হয় ঢাকের তালে, মন্ত্র উচ্চারণে। শেষ হয় অনুষ্ঠানে আগত সবার পুষ্পাঞ্জলি দিয়ে। দুপুরে থাকে হালকা ভূরিভোজ। ভোগের খিচুড়ি, লাবড়া, বেগুনি, চাটনি, পায়েস। তারপর শুরু হয় অনুষ্ঠান। যেখানে অংশগ্রহণ করে কচিকাঁচা থেকে বুড়ো সবাই। চলতে থাকে নানা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। জমিয়ে চলতে থাকে আড্ডা, সঙ্গে দেদার সেলফি। সন্ধ্যার আরতি সবাই মিলে উপভোগ করা হয়। হাতে থাকে কাঁসরের ঘণ্টা, ঢাকের কাঠি। ধূপ, প্রদীপ আর ঢাকের সুরে মণ্ডপ ভরে ওঠে।

ছবি প্রতিবেদক

রাতের খাবারে থাকে এলাহি আয়োজন। সুক্তো, এঁচোড় চিংড়ি, পোলাও, ইলিশ, মাংস বাদ থাকে না কোনও কিছুই। সবশেষে থাকে মুম্বই বা কলকাতার নামকরা শিল্পীর অনুষ্ঠান। রাত গড়ালেও উৎসবের আলো আর আনন্দ যেন কমতে চায় না। শেষ দিনে হয় মাতৃবরণ, সিঁদুর খেলা, সবাই মিলে ধুনুচি নাচ। আর অবশ্যই চেঁচিয়ে বলে ওঠা ‘আসছে বছর আবার হবে।’ দশমী শেষে মায়ের প্রতিমা প্যাক করে গুছিয়ে রাখা পরের বছরের জন্য। স্কুল-অডিটোরিয়াম পরিষ্কার করে সময়ের মধ্যে সবাইকে নিয়ে বাড়ি ফেরা দিয়ে শেষ হয় এবছরের দুর্গাপূজা।

ছবি প্রতিবেদক

আবার শুরু হয় নিত্যদিনের একঘেয়ে ব্যস্ততা, একরাশ বিরক্তি, নিত্যদিনের রান্নাবান্না, ঘর গোছানো। কিন্তু হঠাৎ মনের ভেতরের চাপা আনন্দটা জ্বলে ওঠে যখন শুনি, ছোট মেয়েটা বলে ওঠে ‘হ্যাপি হ্যালোউইন!’ এখন তো তার মানে এখানে ফোর্থ কোয়াটার, হলিডে সিজন। মানেই বন্ধুদের সঙ্গে পটলাক, আড্ডা, গান-নাচ আবার হৈ-হুল্লোড়।

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ