রম্যাণি চক্রবর্তী, মানহাইম (জার্মানি): বাঙালির প্রাণে সব সয়। পাড়ার দাদার মাস্তানি সয়, বান্ধবীর বিয়ে সয়, চপের নাম শিল্প সয়, গুলের নাম গল্পও সয়। কিন্ত যা সয় না, তা হল দুর্গাপুজো ছাড়া শরৎকাল। সে দিশিরা যতই ফল-ফল বলুন না কেন, ঋতুর জেটল্যাগে বঙ্গমনে এখন শুধুই কাশফুল। কেউ বাড়ি ফেরার জন্য উশখুশ করছে, আর কেউ দুগ্গা ঠাউরুনকে বাড়ি ফেরানোর জন্য। মানে ‘গেম অফ থ্রোনস’ বর্ণিত সেই ভয়ংকর ‘উইন্টার ইজ কামিং’-এর আগে বছরের শেষ উষ্ণতা, রোদ মেখে নেওয়ার চেষ্টা। জার্মানির রাইন আর নেকার নদীর মাঝে ছোট্ট শহর মানহাইমে পথের প্রান্তে সূর্যমুখীর সারিতে এখন সেই সূর্যালোকের খেলা! পরবাসেও পুজো পুজো গন্ধ। উমা আসছে।
আলী সাহেব তো সেই কবেই বলেছেন যে তিনটে বাঙালি জুটলে দুটো দুর্গাপূজা হয়। তাই এই অঞ্চল মানে জার্মানির মানহাইম শহরেও দুটো পুজো শুরু হয়েছে আগের বছর থেকে। আমি এখানে এসেছি বছর দুই হতে চলল। সে অর্থে এবার এখানে আমার দ্বিতীয় শারদোৎসব। দুর্গা আরাধনার জন্য যা যা প্রয়োজনীয় উপকরণ, তা তো আছেই। টুকাটাকি অনুষঙ্গও বাদ যায় না। পুজোর আগের দুশ্চিন্তা থেকে দুর্গাপুজোর আড্ডায় স্বজাতি বন্ধুবান্ধবদের সঙ্গে মিলে পরনিন্দা – বাঙালি বিদেশে গিয়ে চরিত্র পালটেছে, এহেন অপবাদ আমাদের পরম শত্রুও দিতে পারবে না।
তবে এই তিনদিন আমাদের ছকভাঙা আনন্দ। ট্রামে, বাসে চোখে পড়ে ভারতীয় পোশাকে সজ্জিত দেশোয়ালি স্বজন। পুজোর ওখানে শোনা যায় ঢাকের আওয়াজ, ইঞ্জিনিয়ার থেকে সদ্য পুরোহিত হওয়া চেনা মানুষটির গম্ভীর স্বরে মন্ত্র উচ্চারণ এবং খাবার জায়গা থেকে ভেসে আসা সুঘ্রাণ। মহড়া দিয়ে আনকোরা শিল্পীদের অনুষ্ঠান মনে করিয়ে দেয় পুজোর সময়কার সন্ধ্যাবেলায় দূর থেকে ভেসে আসা জলসার সুর। আর এখানে শিল্পীদের কি শুধু অনুষ্ঠান করলে চলে? যিনি রবীন্দ্রসঙ্গীতে সুর মেলাচ্ছেন, তিনি আবার সন্ধি পুজোর প্রদীপেরও হিসেব রাখছেন। আসলে দশভুজার পুজোয় বিদেশ বিভূঁইয়ে প্রবাসীরা ছোটখাটো দশখানা হাত নিয়েই কাজ করে যে।
তবে প্রবাসে পুজো নিয়ে যাই বলা হোক, আসল কথা হলো, নিজের চেনা শহর, চেনা পুজো আর চেনা মুখগুলোর জন্য বড্ড মনকেমন করে এই ক’দিন। তাই খিচুড়িটা একটু কম ভালো হলেও বা বিরিয়ানিতে আলু না জুটলেও, এই কদিন ওই চির চেনা টানা টানা চোখের মাঝেই সবাই প্রিয়জনদের খুঁজে নেয়। আর দেবীও আশ্বাস দেন, আসছে বছর আবার হবে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
নিয়মিত খবরে থাকতে ফলো করুন
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.