নিজস্ব ছবি
সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: বেসাতি না গণতন্ত্র? সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা না কি মুনাফা? চিনের সঙ্গে দর কষাকষিতে কোন পথে হাঁটবেন দুঁদে ব্যবসায়ী তথা আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প? বিশ্ব রাজনীতির গোলকধাঁধায় ‘কলেটারেল ড্যামেজ’ কী হংকংয়ের শিকলবন্দি মিডিয়া ব্যারন জিমি লাই? এহেন একাধিক প্রশ্নেরই উত্তর খুঁজতে ব্যস্ত প্রাচ্য এবং পাশ্চাত্যের নীতি নির্ধারকরা। অনেকেই মনে করছেন, বিশ্বজুড়ে ‘নীতি পুলিশি’ থেকে সরে এসে শুধুমাত্র লাভ-ক্ষতির অঙ্কই মার্কিন বিদেশনীতির ভিত হয়ে দাঁড়াবে। ঠারেঠারে সে কথা বুঝিয়েও দিয়েছেন ট্রাম্প। সাম্প্রতিককালে, শুল্কযুদ্ধ থেকে শুরু করে ভারত-চিন-রুশ অঙ্কে হোয়াইট হাউসের ‘খামখেয়ালিপনা’ প্রথাগত ডকট্রিন যে ভেঙে দিয়েছে তা নিয়ে সন্দেহের অবকাশ নেই।
২০১৬ সালে প্রথমবার প্রেসিডেন্ট পদে বসেন ট্রাম্প। তখনই স্পষ্ট ভাষায় জানিয়েছিলেন, জিমি লাইয়ের মুক্তি চাই। প্রয়োজনে বাণিজ্য আলোচনায় প্যাঁচ-পয়জার ব্যবহারে পিছপা হবেন না। তারপর কেটে গিয়েছে এঅক দশক। ফের ‘সাদাবাড়ি’তে ট্রাম্প। তবে এবার ফারাক স্পষ্ট। নীতিও বদলে গিয়েছে আমূল। আর সেখানেই তৈরি হচ্ছে শঙ্কা। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে লাইকে বোড়ে হিসেবে দেখছেন ট্রাম্প বলে অনেকের ধারণা। উল্লেখ্য, ‘মেক আমেরিকা গ্রেট এগেন’ স্লোগানে শুল্কযুদ্ধ শুরু করেছেন। যদিও এরমাঝেই নজরে রাখার মত একটি বদল ঘটে গিয়েছে। ঐতিহাসিকভাবে বন্ধু ভারতের সঙ্গে শুল্ক আলোচনায় খুব বেশি সুর নরম না করলেও, আজীবন শত্রু হিসেবে দেখা রাশিয়া এবং চিনের বিষয়ে বেশ নরম অবস্থান নিয়েছেন তিনি। চিনের সঙ্গে বাণিজ্য বৈঠকের সময়সীমা আর ৯০ দিন বাড়িয়েছেন। সাম্প্রতিক সময়ে চিনের বিরুদ্ধে আক্রমণের ঝাঁজও কিছুটা কমিয়েছেন। আপাতত, সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা, হংকংয়ে গণতন্ত্র এবং জিমি লাইয়ের মুক্তি তাঁর তালিকায় উপরের দিকে নেই।
বলে রাখা ভালো, নিজের নির্বাচনী প্রচারে ট্রাম্প অত্যন্ত দৃঢ়তার সঙ্গে জানিয়েছিলেন লাইয়ের মুক্তি অত্যন্ত সহজ। যদিও ৭৭ বছরের লাইয়ের কারাবাসের ১ হাজার ৬০০ দিন পেরিয়েছে। প্রেসিডেন্ট হিসেবে বাণিজ্য চুক্তিতে লাইয়ের মুক্তির দাবি যুক্ত করতে বললেও তেমন জোরাল আওয়াজ তুলছেন না ট্রাম্প। এনিয়ে লাইয়ের সহযোগী মার্ক সাইমন জানিয়েছেন, জেনেভায় বাণিজ্য বৈঠকে লাইয়ের প্রসঙ্গ উঠে আসে। কিন্তু কোন প্রেক্ষাপটে কথা হয়েছে সেটা জানা যায়নি। অর্থাৎ লাই সমর্থকদের আশঙ্কা একেবারেই অমূলক নয়। অন্যদিকে, নিজেদের ভূ-রাজনৈতিক অবস্থান এবং ভৌগলিক সীমানা প্রসঙ্গে চিরকাল অত্যন্ত স্পর্শকাতর চিন। এহেন অবস্থায় আভ্যন্তরীণ বিষয়ের সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তিকে কোনওভাবেই মেশাবে না বেজিং বলেই ধারণা বিশ্লেষকদের।
উল্লেখ্য, জিমি লাই চিনের রাজনৈতিক অবস্থানের বিরুদ্ধে নিরন্তর লড়াইয়ের একজন গুরুত্বপূর্ণ কর্মী। হংকং-এ চিনের অধিকার কায়েম হওয়ার ঠিক দু’দিন আগে, ১৯৯৯ সালে নিজের সংবাদ সংস্থা ‘অ্যাপল ডেইলি’ চালু করেন তিনি। এই ট্যাবলয়েডের মাধ্যমে গণতন্ত্রের পক্ষে একটানা সওয়াল করেছেন লাই। চিনের সরাসরি কোপে পড়ে এই ট্যাবলয়েড বন্ধ হয়ে যায়। তাঁর বিরুদ্ধে বিদেশি শক্তির সঙ্গে যোগসাজশের অভিযোগ করা হয় সরকারের তরফে। ২০২০ সাল থেকে হাই সিকিউরিটি জেলের সলিটারি সেলে আজীবন কারাবাসের সাজা শোনার দিন গুনছেন জিমি লাই।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
নিয়মিত খবরে থাকতে ফলো করুন
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.