সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: এ যেন একা একা দাবা খেলার মতো। যে কোনও ঘুঁটি যে কোন সময় বদলে দেওয়া কিংবা যে কোনও সময় পছন্দমতো পক্ষ বদল করে নিলেই হল।হ্যাঁ, বছরের পর বছর ধরে এই ছেলেখেলাটাই হাসতে হাসতে খেলে চলেছে আমেরিকা।এহেন ‘দাদাগিরি’র ‘সেই ট্র্যাডিশন সমানে চলিতেছে’। হালফিলে বালোচ লিবারেশন আর্মির গায়ে ‘বিদেশি জঙ্গি’র তকমা সেঁটে দিয়েছে ট্রাম্প সরকার। শুধু তাই নয়, তাদের সহযোগী দ্য মাজিদ ব্রিগেডকেও জঙ্গি তকমা দেওয়া হয়েছে। যা মনে করিয়ে দিচ্ছে তাদের পুরনো স্বভাব। আর সেই স্বভাবে যে কোনও পরিবর্তন হয়নি, তা এবার যেন নতুন করে স্পষ্ট হয়ে উঠল।
বালোচদের প্রসঙ্গে যাওয়ার আগে একবার পিছন ফিরে দেখা দরকার। গত শতকের আটের দশক। সেটা ঠান্ডা লড়াইয়ের সময়। সেই সময় ওসামা বিন লাদেন নামের এক নেতাকে আফগান মুজাহিদিন তকমা দেয় তৎকালীন মার্কিন প্রশাসন। সেই লাদেনই যে পরবর্তী সময়ে আমেরিকার মেরুদণ্ডে গেঁথে দেবে আতঙ্কের দমচাপা তলোয়ার, সেটা অবশ্য তখন তাদের আন্দাজেও আসেনি। আসলে লাদেনকে মাথায় তোলার পিছনে ছিল নির্দিষ্ট এজেন্ডা। সেই সময় রাশিয়া সীমান্ত ঘেষা এশিয়ায় আমেরিকার ‘মুঠি’ তত প্রবল নয়। অতএব সাম,দান দন্ড,ভেদ যেন তেন প্রকারেন রাশিয়া যাতে বেশি বাড়াবাড়ি না করতে পারে সেই উদ্দেশ্যেই লাদেনকে আফগান মুজাহিদের শিরোপা দিয়ে সন্তুষ্ট রাখা।
যদিও দশক ঘুরতে না ঘুরতেই গল্পটা একদম বদলে যায়। এবং সেই ‘তোষামোদকারী’ আমেরিকাকেই টার্গেট করে আল কায়দা। কিংবা,আরও স্পষ্ট করে বললে ওসামা বিন লাদেন। ঘটে যায় ২০০১সালের ৯/১১-র ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারের টুইন টাওয়ারে সেই কুখ্যাত সন্ত্রাসবাদী হামলার ঘটনা। তারপর থেকেই লাদেনকে খ্যাপা কুকুরের মতো খুঁজে বেরিয়েছে আমেরিকা। এক দশক পর লাদেনকে আবোটাবাদের বাড়িতে হত্যা করে আমেরিকান কমান্ডো বাহিনী।
আল কায়দা কিংবা লাদেনের পর এবার বালোচ আর্মি। যাকে পরিস্থিতিমাফিক সন্ত্রাসবাদী সংস্থার তকমা দেগে দিয়েছে আমেরিকা। আসলে ট্রাম্পের ‘নয়নের মণি’ পাকিস্তান। এই মুহূর্তে পাক সেনাপ্রধান আসিম মুনির আমেরিকা সফরে রয়েছেন। তাঁকে খুশি করে ইসলামাবাদের সঙ্গে ‘বন্ধুত্ব’ আরও একটু পাকা করতেই এমন সিদ্ধান্ত, তা বলাই বাহুল্য। অথচ এই বালোচ আর্মিকেই একসময় স্বাধীনতা সংগ্রামীর সম্মানে ভূষিত করেছিল হোয়াইট হাউস। কিন্তু সময়ের চাকা ঘুরলেই সুবিধামতো অবস্থান বদলে নিতে জানে আমেরিকা। তখন পাকিস্তান সরকারের সঙ্গে ঠিক ততটাও সুসম্পর্ক ছিল না। তাই বালোচ আর্মিকে ‘তোল্লায়’ দিয়ে পাকিস্তানকে একটু চাপে রাখা আর কি! এখন ট্রাম্প ক্ষমতায়। সদ্য বাণিজ্য চুক্তি হয়েছে। ট্রাম্প ও পাকিস্তান সরকারের সম্পর্কটাও এখন অনেকটা ‘শোলে’ ছবির জয়-বীরুর মতো। অতএব পুরস্কার- একসময়ের স্বাধীনতা সংগ্রামী বালোচ আর্মিকে বিদেশি সন্ত্রাসবাদীর তকমা।কিন্তু আজ বাদে কাল ‘প্রিয় বন্ধু’ পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক খারাপ হলে এই বালোচ আর্মিকেই ফের স্বাধীনতা সংগ্রামীর সম্মান ফিরিয়ে দেবে না তো আমেরিকা! সেই প্রশ্নই এখন ঘুরছে বিশ্বজুড়ে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
নিয়মিত খবরে থাকতে ফলো করুন
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.