৯ অক্টোবর, বৃহস্পতিবার। শান্তিচুক্তি নিয়ে ট্রাম্পের ঘোষণার পর খান ইউনিসে উদযাপনে প্যালেস্তানীয়রা। ছবি: এএফপি।
সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: গাজা শান্তিচুক্তির প্রথম দফায় একমত হয়েছে ইজরায়েল এবং হামাস। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের এই ঘোষণার পরই উল্লসিত প্যালেস্তিনীয়রা। ইতিমধ্যেই শুরু হয়ে গিয়েছে উদযাপান। কিন্তু কূটনৈতিক মহলে এখন একটা প্রশ্নই ঘোরাফেরা করছে, এবার কি তাহলে গাজা ছাড়বে ইজরায়েলি সেনা? অন্যদিকে, প্যালেস্তাইনের সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাস কি মুক্তি দেবে ইজরায়েলি পণবন্দিদের?
বিশেষজ্ঞদের মতে, শান্তিচুক্তির প্রথম দফায় দু’পক্ষ একমত হলেও যুদ্ধ যে শেষ হয়ে গেল এমনটা নয়। কারণ, এই চুক্তির প্রাথমিক পর্ব নিয়ে বিস্তারিত কোনও তথ্য এখনও প্রকাশ্যে আসেনি। শুধু মাত্র জানা গিয়েছে, গাজার কিছু অংশ থেকে ইজরায়েল তাদের সেনা প্রত্যাহার করে নেবে। অন্যদিকে, ইজরায়েলি পণবন্দিদের মুক্তি দেবে হামাস। কিন্তু বিষয়টি এতটা সহজ নয়। কারণ, হামাস ভালো করেই জানে, পণবন্দিদের মুক্তি দিলে ইজরায়েলের সঙ্গে সমঝোতার ক্ষেত্রে সশস্ত্র গোষ্ঠীটির প্রভাব বা কর্তৃত্ব লঘু হয়ে যাবে। শুধু তাই নয়, পণবন্দিদের মুক্তির পর ইজরায়েল যে গাজায় আর রক্তক্ষয়ী হামলা চালাবে না, সেটারও কোনও নিশ্চয়তা নেই। কারণ, গত মার্চ মাসে যুদ্ধবিরতির কথা বলেও গাজায় মারণ হামলা চালিয়েছিল ইহুদি দেশটি।
পক্ষান্তরে, ইজরায়েলের জনগণের একাংশও প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর প্রতি বীতশ্রদ্ধ। তারাও চান অবিলম্বে এই যুদ্ধের অবসান হোক। কারণ, টানা এই যুদ্ধের ফলে বিশ্ব দরবারে ইজরায়েলের ভাবমূর্তি যথেষ্ট নষ্ট হয়েছে। বাড়ছে আন্তর্জাতিক চাপও। কিন্তু বর্তমানে ইজরায়েলের রাজনৈতিক সমীরকণ আবার ভিন্ন। ইজরায়েলে রয়েছে জোট সরকার। বেশ কিছু চরমপন্থী মন্ত্রীর সমর্থনেই গদি টিকে রয়েছে নেতানিয়াহুর। বিশেষজ্ঞদের মতে, ইজরায়েল যদি শান্তিচুক্তিতে সর্বতোভাবে সম্মত হয়, তাহলে নেতানিয়াহুর সরকার থেকে সমর্থন তুলে নিতে পারেন ওই চরমপন্থী নেতারা। তাই বিশেষজ্ঞদের বিশ্বাস, গদি হারানোর ভয়েই ইচ্ছাকৃতভাবে যুদ্ধ দীর্ঘায়িত করছেন ইজরায়েলের প্রধানমন্ত্রী।
শান্তিচুক্তি নিয়ে ট্রাম্প তাঁর সোশাল মিডিয়া ট্রুথ সোশালে লেখেন, ‘আমি গর্বিত গাজা শান্তিচুক্তির প্রথম দফায় একমত হয়েছে ইজরায়েল এবং হামাস। এর অর্থ প্যালেস্তাইনের সশস্ত্র গোষ্ঠীটি ইজরায়েলি পণবন্দিদের মুক্তি দেবে। পরিবর্তে ইজরায়েল গাজার কিছু অংশ থেকে তাদের সেনা তুলে নেবে।’ তিনি আরও লেখেন, ‘আরব এবং মুসলিম দেশগুলির কাছে এটি একটি গর্বের দিন। ইজরায়েল-হামাসের সংঘাত থামাতে আমি কাতার, মিশর এবং তুরস্ককের মতো মধ্যস্থতাকারী দেশগুলিকেও ধন্যবাদ জানাতে চাই।’
অন্যদিকে, হামাস একটি বিবৃতিতে জানিয়েছে, গাজায় যুদ্ধ বন্ধ করে শান্তি ফেরাতে তারা চুক্তিতে রাজি হয়েছে। ইহুদি দেশটি গাজার কিছুটা অংশ থেকে তাদের সেনা তুলে নেবে। পরিবর্তে ইজরায়েলি পণবন্দিদের মুক্তি দেবে হামাস। গাজা শান্তিচুক্তিকে ইতিমধ্যেই স্বাগত জানিয়েছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী কিয়ের স্টার্মার। অন্যদিকে, ইজরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুও তাঁর প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন। জানিয়েছেন, এটি ইজরায়েলের জন্য একটা বড় দিন।
মার্কিন প্রেসিডেন্টের এই ঘোষণার পরই উদযাপন শুরু করে দিয়েছেন প্যালেস্তিনীয়রা। বছর পঁয়তাল্লিশ রান্ডা সামেহ বলেন, “আমি বিশ্বাস করতে পারছি না যে দু’বছর ধরে চলা এই দুঃস্বপ্নের অবসান ঘটতে চলেছে। প্রচুর মানুষের মৃত্যু হয়েছে। আমরা সর্বস্ব হারিয়েছি।” আরও এক বাসিন্দা বলেন, “আমাদের এবার বিশ্রামের প্রয়োজন। এই যুদ্ধে আমার ভাই এবং পরিবারের সদস্যদের মৃত্যু হয়েছে। ঠিক করে তাদের কবরও দেওয়া হয়নি। এবার সেই কাজগুলি আমি সম্পন্ন করব।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
নিয়মিত খবরে থাকতে ফলো করুন
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.