অতুলচন্দ্র নাগ, ডোমকল: সিভিক ভলান্টিয়ারকে সুপারি দিয়ে ভাইকে অপহরণের ছক। শুধু তাই নয়, নকল পুলিশ নিয়ে গিয়ে একেবারে বাড়ি থেকে অপহরণ। যদিও সেই ছক ভেস্তে দেয় পুলিশ। ঘটনা জানতে পেরেই তদন্তে নেমে অভিযুক্ত সিভিক ভলান্টিয়ার হুমায়ুন কবির-সহ ৮ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। ধৃত ওই সিভিক ভলান্টিয়ার ডোমকল থানায় কর্মরত ছিলেন। বুধবার সন্ধ্যায় চাঞ্চল্যকর ঘটনাটি ঘটেছে ডোমকল থানা এলাকায়। ঘটনাকে কেন্দ্র করে তীব্র চাঞ্চল্য তৈরি হয়। শুধু তাই নয়, সিভিক ভলান্টিয়ারের কীর্তি সামনে আসতে জেলা পুলিশ প্রশাসনেও তীব্র চাঞ্চল্য তৈরি হয়েছে।
পুলিশ সূত্রে খবর, অপহৃত লালচাঁদ মণ্ডলের বাবার দুই বিয়ে। পুরো ঘটনা সাজান প্রথম পক্ষের দাদা। তিনিই ধৃত ডোমকল থানার সিভিক ভলান্টিয়ার হুমায়ুন কবিরকে ছ’লক্ষ টাকার বিনিময়ে সুপারি দেয়। এরপরেই ধৃত অপহরণের ছক সাজায়। এক লাখ টাকা দিয়ে বেশ কয়েকজনকে ভাড়া করেন অভিযুক্ত হুমায়ুন। বুধবার সন্ধ্যায় শুরু হয় ‘অপারেশন’! জানা যায়, এক লক্ষ টাকায় ভাড়া করা সাগরেদদের নকল পুলিশ সাজিয়ে লালচাঁদ মণ্ডলকে তাঁর বাড়ি থেকে অপহরণ করেন হুমায়ুন। এজন্য একটি গাড়িও ভাড়া করেন তাঁরা। সন্দেহ এড়াতে চারপাশে লাগানো হয় পুলিশ স্টিকার! কেন লালচাঁদকে নিয়ে যাচ্ছেন, তা জানতে চাইলে তাঁর স্ত্রীকে ধৃতরা হুমকি দেয় বলেও অভিযোগ।
পুলিশ সূত্রে খবর, ধৃতদের উদ্দেশ্য ছিল লালচাঁদ মণ্ডলকে কলকাতার কোনও গোপন ডেরায় নিয়ে গিয়ে প্রায় ৭০ লক্ষ টাকা মূল্যের সম্পত্তি সৎ দাদাদের নামে লিখে নেবে। কিন্তু ছক ভেস্তে যায় যখন লালচাঁদের স্ত্রী থানায় পৌঁছে যান! স্বামীকে তুলে নিয়ে যাওয়ার পরেই স্ত্রী সেফালী বিবি স্বামীর খোঁজে লোকজন নিয়ে থানায় পৌঁছে যান। কেন লালচাঁদকে ধরে আনা হয়েছে সে বিষয়ে বারবার পুলিশকে প্রশ্ন করতে থাকেন। যা শুনে থানার আইসি পার্থসারথি মজুমদার-সহ অন্যান্য পুলিশ কর্মীরা রীতিমতো চমকে যান। সেফালী বিবি’র মুখে সব কথা শোনার পর কাল বিলম্ব না করে খোঁজখবর নিতে শুরু করে ঘটনা কি? সতর্ক করা হয় ডোমকল থানার সব পুলিশ ক্যাম্পকে। পরীক্ষা করা হয় ডোমকল বাজার এলাকার কয়েকটি মোড়ের সিসি ক্যামেরা। তার ভিত্তিতে গাড়ির ব্যাপারে নিশ্চিত হয় পুলিশ। কিন্তু তদন্তে নেমে পুলিশ আধিকারিকরা জানতে পারেন, যে গাড়িটিকে পুলিশ স্টিকার লাগিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল সেটি ডোমকলেই রয়েছে। এরপরেই গাড়ির নম্বর ধরে দুই গাড়ির চালককে ধরে এবং তাঁদের জিজ্ঞাসা করতেই পুলিশ আধিকারিকরা পুরো ঘটনার সঙ্গে সিভিক ভলান্টিয়ার হুমায়ুন কবির যে যুক্ত তা জানতে পারেন।
আর দেরি করেননি তদন্তকারীরা। বুধবার রাতেই বাড়ি থেকে অভিযুক্ত হুমায়ূনকে হাতেনাতে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। দীর্ঘ জেরায় হুমায়ুন কবির স্বীকার করে নেয়, লালচাঁদ মণ্ডলকে তাঁরাই অপহরণ করেছেন। জানা গিয়েছে সিভিকের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে অন্য একটি গাড়িতে থাকা ব্যক্তিদের মোবাইল ট্র্যাক করে পুলিশ গাড়ির গতিবিধির উপর নজর রাখতে শুরু করে পুলিশ। জানতে পারেন, গাড়িটি কৃষ্ণনগর হয়ে কলকাতার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। সঙ্গে সঙ্গে ডোমকলের পুলিশ রানাঘাট ও বারাসাত থানাকে সজাগ করে। তার ভিত্তিতে ওই দুই থানা জাতীয় সড়কে নাকা চেকিং শুরু করে দেয়।
পুলিশ জানায় রাস্তায় পুলিশের নাকা চেকিং হচ্ছে দেখতে পেয়ে দুষ্কৃতিরা রানাঘাটের আগে থেকেই গাড়ি ঘুড়িয়ে ফের ডোমকলের দিকে ফিরতে থাকে। ডোমকলের পুলিশ পুরো বিষয়টি উপর কড়া নজরদারি চালাতে থাকে। এরপর ভোররাতে রীতিমতো সিনেমার কায়দায় নকল পুলিশের গাড়িকে ঘিরে ধরে অপহৃত লালচাঁদ মণ্ডলকে উদ্ধার করে। গ্রেপ্তার করা হয় গাড়িতে থাকা নকল পুলিশের দলকে। ডোমকলের এসডিপিও শুভম বাজাজ বলেন, ”বুধবার সন্ধ্যায় এক ব্যক্তিকে অপহরণ করা হয়েছিল, খবর পাওয়ামাত্র ডোমকলের পুলিশ তৎপর হয়ে তাকে উদ্ধার করেছে। ঘটনায় ৮ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। যার মধ্যে একজন সিভিক ভলান্টিয়ার আছে।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
নিয়মিত খবরে থাকতে ফলো করুন
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.