Advertisement
Advertisement

Breaking News

সরস্বতী পুজো

ছাত্রীরাই পুরোহিতের আসনে, দেড় দশক ধরে কলেজে প্রথাভাঙা পথে সরস্বতী বন্দনা

২০০৬ সাল থেকে এখানে ছাত্রীদের হাতেই পূজিতা হন বাগদেবী।

Girl student perform Saraswati Puja in Purulia college
Published by: Sucheta Sengupta
  • Posted:January 30, 2020 3:41 pm
  • Updated:January 30, 2020 5:55 pm   

সুমিত বিশ্বাস, পুরুলিয়া: প্রথা ভেঙে এবার মালদহে আদিবাসী তরুণীর হাতে পুজো পেয়েছেন মা সরস্বতী। দুর্গাপুরে তিন ছাত্রীর পুরোহিতের আসনে বসার কথা থাকলেও, চিরাচরিত সামাজিক গোঁড়ামি থেকে বেরিয়ে সেই পরিকল্পনার বাস্তবায়িত হয়নি। তবে পুরুলিয়ার নিস্তারিণী মহাবিদ্যালয়ে ছাত্রীরাই বাগদেবীর আরাধনা করে থাকেন এক দশকেরও বেশি সময় ধরে। এবারও তার ব্যতিক্রম হল না। শাস্ত্র বিধি মেনে তন্ত্রধারক থেকে পূজারি – সব ভূমিকাতেই অগ্রভাগে ছাত্রীরা। মন্ত্রোচ্চারণ, যজ্ঞ করে ছাত্রীরাই পুজো করলেন। আওড়ালেন পুষ্পাঞ্জলির মন্ত্রও।

Advertisement

prl-girl-priest1

আজ নতুন নয়। ২০০৬ সাল থেকেই ছক ভাঙা শুরু। তখন থেকেই এই মহাবিদ্যালয়ের সরস্বতী পুজো করে আসছেন ছাত্রীরাই। এবারও তাইই হল। ঘন্টা দেড়েক ধরে কলেজের প্রেক্ষাগৃহে চলল পূজার্চনা। ছাত্রীদের এই মন্ত্রোচ্চারণ মাইক্রোফোনে তুলে ধরল কলেজ কর্তৃপক্ষ। ফি দিনের মত এবারও এই পুজো দেখতে ভিড় জমিয়ে ছিলেন অন্যান্য কলেজের ছাত্রছাত্রী থেকে অধ্যাপকরাও। কলেজের অধ্যক্ষ ইন্দ্রাণী দেব বলেন, “নারী শিক্ষার প্রসারে এই মহিলা মহাবিদ্যালয় গড়ে উঠেছিল। কলেজ চালাতে প্রায় সব কাজ মহিলারাই করছেন। তাহলে সরস্বতী পুজোপাঠই বা কেন করবে না? এই ভাবনা থেকেই ২০০৬ সাল থেকে ছাত্রীদের পূজার্চনার পর্বের পথ চলা শুরু হয়। আজও তা চলছে।”

[আরও পড়ুন: ‘কোথায় ছিলেন?’, গান্ধীঘাটে গিয়ে বারাকপুরের পুলিশ কমিশনারকে কড়া ধমক রাজ্যপালের]

তবে এই জন্য প্রথম দিকে কলেজ কর্তৃপক্ষকে কম কাঠখড় পোড়াতে হয়নি। পুজো পাঠে উৎসাহী ছাত্রীদের খুঁজে বের করতে হয়। তাদের আবার উচ্চারণ স্পষ্ট আছে কি না, সেটাও অন্যতম বিষয় ছিল। এরপর থেকেই ফি বছর এই পূজার্চনায় সব সেমিস্টারের ছাত্রীদের নেওয়া হয়। যাতে পরের বছর শেষ সেমিস্টারের ছাত্রীরা কলেজ থেকে বেরিয়ে গেলে এই কাজে যাতে কোনও অসুবিধা না হয়। অন্যান্য সেমিস্টারের ছাত্রীরা এই কাজ চালিয়ে নিতে পারে। তাই প্রতি বছর নতুন মুখও তুলে আনা হয়। ফি বছরই পুজোর আগে প্রায় দু’সপ্তাহের বেশি সময় ধরে প্রশিক্ষণ চলে। প্রশিক্ষক পুরোহিত ধনঞ্জয় বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “আমি সেই ২০১০ সাল থেকে এই পুজোর প্রশিক্ষণ দিয়ে আসছি। ছাত্রীদের উৎসাহ দেখে খুব ভাল লাগে। তাই মন্ত্র বা যজ্ঞের খুঁটিনাটি শেখাতে একেবারেই বেগ পেতে হয় না।”

[আরও পড়ুন: আজও বৃষ্টির সম্ভাবনা, শনিবার থেকেই ফের নামবে তাপমাত্রার পারদ]

এবার এই পুজোয় অংশ নিয়েছিল মোট ন’জন ছাত্রী। তন্ত্রধারকের ভূমিকায় থাকা এডুকেশন অনার্সের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী নুপূর মণ্ডল ও পূজারি রাষ্ট্রবিজ্ঞানের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী বিউটি মাজির কথায়, “কলেজ কর্তৃপক্ষ পুজো পাঠের দায়িত্ব আমাদের হাতে তুলে দেওয়ায় আমরা গর্বিত। এই কাজ করতে পেরে আমাদের ভীষণ ভাল লাগে।” পুজো উপলক্ষে রঙ্গোলিতে কলেজের প্রেক্ষাগৃহ সাজিয়ে তোলে ছাত্রীরা। সেই রঙ্গোলি রচনাতেও দেখা যায় নারীর ক্ষমতায়ন ও স্বনির্ভরতা-সহ নানান সামাজিক বার্তা। কবির কথাতেই তাই কলেজের কর্তৃপক্ষ বলছে, “বিশ্বে যা কিছু মহান সৃষ্টি চির-কল্যাণকর/ অর্ধেক তার করিয়াছে নারী, অর্ধেক তার নর।”

দেখুন ভিডিও:

ছবি: সুনীতা সিং।

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ