সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: নারায়ণ শিলা পুজোয় মগ্ন শান্তিপুরের মুখোপাধ্যায় পরিবারের সদস্যরা। তাঁর কাছে এসে প্রসাদের আবদার করে ছোট্ট এক মেয়ে । বিরক্ত হয়ে তাড়িয়ে দেন তাঁরা। পুজো শেষে আর তার খোঁজ পাওয়া যায়নি। গভীর রাতে স্বপ্নে ফের তার দেখা মেলে। স্বপ্নাদেশ দিয়ে পঞ্চমুণ্ডির আসনে পুজো করতে বলে ছোট্ট মেয়েটি। আর সেই রীতি মেনে আজও মুখোপাধ্যায় পরিবারে চাঁদুনি দেবী আসেন ঘটা করে।
দশমীতে কাঠামোতে মাটি দেন পরিবারের বয়োজ্যেষ্ঠ মহিলা। তারপর থেকে দুর্গাদালানে শুরু হয় প্রতিমা গড়ার কাজ। একাদশী থেকে নহবত বসে। প্রতিমা নিরঞ্জন পর্যন্ত সানাইয়ের বাদ্যে ভরে থাকে গোটা বাড়ি। আলাদা করে বসে নহবতখানা। সারাদিন আট প্রহরে সানাই বাজে।
দীপান্বিতা অমাবস্যার আগে প্রতিমা রঙের পর শুরু হয় কেশসজ্জা। আজও জবাকুসুম তেল ব্যবহার করা হয়। তা পরিবারের পুরুষ সদস্যরা পরিয়ে দেন প্রতিমার মাথায়। রাতভর চলে প্রতিমা সাজানোর কাজ। চাঁদুনি দেবীর মালায় রয়েছে বিশেষত্বের ছোঁয়া। রঙ্গন ফুলের রেপ্লিকা হিসাবে লাল মোমের মালা এবং বেল ও গোলাপের আদলে মোমের মালা পরানো হয় দেবীকে।
পুজোর দিন ভোরে পরিবারের দুই মহিলা সদস্য জল সইতে যান। তাঁদের ঘটে করে আনা জলই প্রতিমার সামনে রেখে পুজো করা হয়। এরপর সকালে পরিবারে পৈতে হওয়া পুরুষ সদস্যরা গয়না পরেন। মায়ের হাতে শাঁখা-পলা বাঁধানো-সহ সাত রকমের গয়না রয়েছে। এছাড়া গলায় নানা রকমের হার-সহ নানা গয়নাগাটি পরেন। পায়ে নুপূরও পরানো হয় প্রতিমাকে। সাজানো হয় শিবকেও।
দেবী প্রতিমা দুর্গাদালানে তৈরি হলেও, পুজো হয় বাড়ির বাইরে। দুর্গাদালান থেকে প্রতিমা বেরনোর আগে মিষ্টি দেওয়া হয়। রুপোর চামর দিয়ে হাওয়া করে রুপোর ছাতা মাথায় নিয়ে যাওয়া হয় মন্দিরে। পথে তাঁকে জল, মিষ্টি দিয়ে শীতল দেওয়া হয়।
দুপুরে চণ্ডীপাঠ হয়। ভাত, তরকারি, খিচুড়ি, কলার বড়া, নানারকম ভাজা দিয়ে ভোগ দেওয়া হয় প্রতিমাকে। তাই দুপুর থেকেই পরিবারের দীক্ষিত মহিলা সদস্যরা ভোগ রান্নায় হাত মেলান। কলকাতা থেকে ক্ষীরের মিষ্টিও থাকে দেবীর ভোগে।
নিশিরাতে পুজোর আয়োজন করা হয়। তবে কোনও পুরোহিত চাঁদুনি দেবীর পুজো করেন না। পরিবারের পুরুষ সদস্য তালপাতার পুঁথিতে লেখা নিয়ম অনুযায়ী পুজো করেন। পুজোয় ছাগবলি দেওয়া হয়। মানত থাকলে ধুনো পোড়ানোও হয়।
পুজোর পর প্রতিমার বিশ্রামে বাসরঘরও রয়েছে। ভেলভেটে সাজানো বিছানা রয়েছে। পানদানি, আতরদানি দেওয়া হয় শয্যায়। পরদিন বেলা ১২টার পর বাসর ভাঙানোর অনুষ্ঠান হয়। তার আগে মন্দিরের কোনও বাসনপত্র নাড়াচাড়া করা হয়। পরিবারের সদস্যরা মনে করেন, দেবী গভীর রাত পর্যন্ত পুজো গ্রহণ করেছেন। তাই তাঁকে বিশ্রাম দেওয়া প্রয়োজন। তাই বেলা ১২টার পর দরজায় কড়া নেড়ে বাজনা বাজিয়ে দেবীকে জাগানো হয়।
সন্ধেয় দেবীবরণের পালা। পরিবারের মহিলা সদস্যরা বরণ করেন। তারপর কাঁধে চড়ে প্রতিমা নিরঞ্জনে নিয়ে যাওয়া হয়। পরিবারের পুরুষ সদস্য এবং মেয়েরা শোভাযাত্রায় অংশ নিতে পারেন। তবে গৃহবধূরা এখনও কেউ নিরঞ্জনের শোভাযাত্রায় অংশ নিতে পারেন না। দেবী যাওয়ার সময় দু’টি জায়গায় জল, মিষ্টি দেওয়া হয়। কাঁধে চড়ে সেই প্রসাদ গ্রহণ করেন তিনি।
নিরঞ্জন ঘাটের প্রায় ৫০০ মিটার আগে পঞ্চাননতলা এলাকায় বাজনা বাজানো বন্ধ করা হয়। সেখানে শোকপালন করা হয়। এরপর ঘাটের কাছে গয়না খুলে নেওয়া হয়। এরপর প্রতিমা নিরঞ্জনের পালা। বাড়ি ফিরে বিজয়ার শুভেচ্ছা বিনিময় করেন পরিবারের সদস্যরা।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
নিয়মিত খবরে থাকতে ফলো করুন
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.