সুমন করাতি, হুগলি: ঘরে রয়েছে সারমেয়। গমগম করে চলছে টিভি। ভরসন্ধ্যায় ঘিঞ্জি এলাকায় নিজের বাড়িতেই নৃশংসভাবে খুন খুদে। কে বা কারা খুন করল তাকে? সারমেয়র চিৎকারের পরেও কেন কেউ এগিয়ে এল না? হুগলির কোন্নগরের আদর্শনগরের শিশুমৃত্যুর ঘটনায় পরতে পরতে রহস্য। কারণ নিয়ে ধন্দে তদন্তকারীরাও। স্পষ্ট করে কিছুই বলতে পারছেন না সদ্য সন্তানহারা বাবা ও মা।
একমাত্র সন্তানকে হারিয়ে শোকে পাথর শিশুর বাবা পঙ্কজ শর্মা। ছেলেকে পাশবিকভাবে খুন করা হয়েছে বলেই জানান তিনি। ছেলের খুনিদের শাস্তির দাবি করে পঙ্কজের অভিযোগ, বাড়িতে থাকা বিভিন্ন জিনিস দিয়ে মারধর করা হয়েছে তাঁর একমাত্র সন্তানকে। তিনি জানান, বাড়ির সিঁড়ির কাছে একটি থান ইট ছিল। সেটা দিয়ে মাথায় আঘাত করা হয়েছে। ঘরে একটি গণেশ মূর্তি ছিল। সেটা দিয়েও আঘাত করা হয়েছে। আর রান্নাঘরে যে সবজি কাটার ছুরিটা ছিল, সেটি ঘরেই রক্তমাখা অবস্থায় উদ্ধার হয়েছে। বেঁকে গিয়েছে সেটি। সদ্য সন্তানহারা বাবা কাঁদতে কাঁদতে বলেন, ‘‘এটা ব্রুটালি মার্ডার।’’
যদিও ছেলের খুনি ঠিক কারা, তা নির্দিষ্ট করে বলতে পারেননি তিনি। তবে পঙ্কজ জানান, কয়েকদিন আগে ছেলের সঙ্গে স্কুলের পুলকারে একজন সিনিয়রের সাথে ঝামেলা হয় ছোট্ট স্নেহাংশুর। তিনি দাবি করেন, বাড়িতে যে ভলিউমে টিভি চলছিল, তা কোনও বাড়িতেই চলে না। তাঁর ছেলে কখনও এত গমগম করে টিভি চালাত না। তিনি বলেন, ‘‘সবজি কাটার ছুরি দিয়ে আঘাত করা হয় ছেলেকে। টেবিলে মাথা ঠোকা হয়েছে। তাছাড়া থান ইট, গণেশমূর্তি দিয়ে আঘাত করা হয়েছে। ছেলের মাথার সামনে থেকে পিছনের দিকে আঘাতের চিহ্ন।’’ পঙ্কজ আরও জানান, যে সময় খুদেকে খুন করা হয়, সেই সময় বাড়িতে তাঁরা কেউই ছিলেন না। সেই সুযোগই কাজে লাগিয়েছে খুনি।
পঙ্কজ জানান, বাড়িতে পোষ্য কুকুর রয়েছে। শুক্রবার রাতে তারস্বরে ডাকছিল সে। কিন্তু এত জোরে টিভি চলছিল যে কেউই কিছু বুঝতে পারেননি। স্থানীয়দের দাবি, তাঁরা অপরিচিত কাউকে বাড়ির আশেপাশে দেখেনি। প্রশ্ন উঠছে, তাহলে কি পরিবারের কেউই যুক্ত? পুলিশ ইতিমধ্যে খুনে ব্যবহৃত জিনিসপত্র বাজেয়াপ্ত করেছে। ফরেনসিক টিমও তথ্য সংগ্রহের কাজ শুরু করেছে। শনিবার সকালেই ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন চন্দননগর পুলিশ কমিশনার অমিত পি জাভালগি। তিনি বলেন, “কী কারণে শিশুটিকে এভাবে খুন হল, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। পরিবারের সকলের সঙ্গেও কথা বলা হচ্ছে। এই খুন করে কী কারও লাভ থাকতে পারে, সে বিষয়টিও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।”
হত্যাকাণ্ড নিয়ে একাধিক প্রশ্নের ভিড়। যৌথ পরিবারের সন্তান খুদে পড়ুয়া। প্রশ্ন উঠছে, বাড়ির সকলের নজর এড়িয়ে কীভাবে একটি ঘরে খুন হল খুদে? দ্বিতীয়ত, পোষ্য সারমেয়ই বা খুনের সময় কোথাও ছিল? তার চিৎকার কেন কারও কানে গেল না? তবে কি খুনি পরিচিত? তৃতীয়ত, খুদে পড়ুয়ার বাড়ির এলাকা খুবই ঘিঞ্জি। তা সত্ত্বেও রাস্তার উপরের একটি বাড়িতে নৃশংস হত্যালীলা চলল, তা কেউ টের পেল না? সমস্ত প্রশ্নের উত্তর খুঁজছে পুলিশ।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
নিয়মিত খবরে থাকতে ফলো করুন
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.