Advertisement
Advertisement
Third World War

যুদ্ধ নিয়ে আবিল রোম্যান্টিকতা, চলেছি কোন নরক অভিমুখে?

পৃথিবীর এক ভয়ংকর বিকৃত চেহারা– সে এক অবারিত বিকৃতির নরক!

This world going towards Third World War
Published by: Kishore Ghosh
  • Posted:June 23, 2025 12:24 am
  • Updated:June 23, 2025 12:24 am  

আমরা কি ক্রমশ এগিয়ে চলেছি তৃতীয় কোনও বিশ্বযুদ্ধের দিকে? আসলে, ‘যুদ্ধ’ বিষয়ে আবিল রোমান্টিকতা রয়েছে কিছু মানুষের মনে!

এ মুহূর্তে পৃথিবীর অবস্থাটা ঠিক কেমন? হুবহু বলে গিয়েছেন রবীন্দ্রনাথ, যিনি পৃথিবী ছেড়েছিলেন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের মধ্যে: ‘খরবায়ু বয় বেগে, চারি দিক ছায় মেঘে’। সত্যিই কি ঘনিয়ে আসছে আরও এক মহাযুদ্ধের মেঘ? মধ‌্যপ্রাচ্যে বিপুল হানাহানির খরবায়ু ছড়িয়ে পড়ছে পৃথিবীজুড়ে। টলমল করছে ভবিষ‌্যৎ অনিকেত কিনারে। পৃথিবীর বহু দেশে নিষিদ্ধ ‘পুঞ্জ’-বোমার আকস্মিক আঘাতে ইরান গুঁড়িয়ে দিয়েছে ইজরায়েলের অনেকগুলি শহর। ইজরায়েলও অব‌্যর্থ মিসাইল হানা চালিয়েছে ইরানের গোপন আরাক নিউক্লিয়ার সাইটে।

আমেরিকার কাছে চেয়ে চলেছে ক্রমাগত বাঙ্কার ব্লাস্টার, পাহাড়ের ২০০ ফুট ভিতরে ইরানের সবথেকে বড় নিউক্লিয়ার সাইট চুরমার করার জন‌্য। আমেরিকা কি ইজরায়েলের হাতে তুলে দেবে সেই ১৪ হাজার কেজির ‘ম‌্যাসিভ অর্ডন‌্যান্স পেনিট্রেটর’? ট্রাম্প, কী করবেন জানা নেই, তবে ইরান ইস্যুতে দু’-সপ্তাহ সময় চেয়েছেন। তিনি নাকি জানেন কোথায় কোন বাঙ্কারে ঘাপটি মেরে আছে ইরানের সর্বোচ্চ শাসক আয়াতোল্লা আলি খামেনেই। কাজেই ইচ্ছা হলে ‘ডন’ নাকি তঁাকে নাশ করতে পারেন। ওদিকে, প্রকাশে‌্য এসেছে চিনের ইরান-সমর্থন। এবং ইউরোপে ব্রিটেন, ফ্রান্স, জার্মানির বিদেশ-মন্ত্রীদের সঙ্গে আলোচনা চক্রে বসেছেন ইরানের বিদেশ-মন্ত্রী আব্বাস আরাগাচি। ভ্লাদিমির পুতিন, যিনি নিজে যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছেন ইউক্রেনের সঙ্গে, ইরান ও ইজরায়েলকে উপদেশ দিয়েছেন যুদ্ধ থামিয়ে আলোচনায় বসার মহৎ উপদেশ।

এই মুহূর্তে বার্নাড শ’-র বিখ‌্যাত নাটক ‘আর্মস অ‌্যান্ড দ‌্য ম‌্যান’-এর মোক্ষম বক্তব‌্য অনেকের মনে আসতে পারে: কোনও সম্পূর্ণ বাস্তববাদী মানুষ যুদ্ধে যাবে না এবং প্রেমে পড়বে না। কেননা পূর্ণ বাস্তববাদ জানে, যুদ্ধজয়ের স্বপ্ন ও গৌরব, এবং প্রেমের সুখস্বপ্ন ও চিরন্তনতা কতদূর অলীক। যুদ্ধ বিষয়েও মানুষের মনে যুগে-যুগে এক বিপজ্জনক রোম‌ান্টিকতা ও অবাস্তব রূপকথা তৈরি করা হয়েছে। যাঁরা তা তৈরি করেছেন, অধিকাংশই যুদ্ধে না-যাওয়া কবি, সাহিত‌্যক, শিল্পী। যুদ্ধ সম্পর্কে অন্তিম ও অমোঘ সত‌্য কথাটি বলছেন বুদ্ধদেব বসুর কাব‌্যনাট‌্য ‘প্রথম পার্থ’-কে স্বয়ং কৃষ্ণ: ‘সব যুদ্ধই অন‌্যায়’! পৃথিবীর সমস্ত যুদ্ধের আদি সত‌্য কতদূর নির্মম, তা বলেছিলেন উইস্টন চার্চিল ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পরেই তঁার প্রথম ভাষণে, ১৯৪০-এর ১৩ মে: ‘ব্লাড, ওয়েল, টিয়ার্স অ‌্যান্ড সোয়েট’– রক্ত, শ্রম, কান্না এবং স্বেদ।

পৃথিবী যদি এগতে থাকে আরও এক বিশ্বযুদ্ধের দিকে, তাহলে আমরা যেন মনে রাখার চেষ্টা করি ১৯৪৮ সালে প্রকাশিত অল্ডাস হাক্সলি-র ‘এপ অ‌্যান্ড এসেন্স’ উপন‌্যাসটি, যেখানে হাক্সলি তুলে ধরেছেন নিউক্লিয়ার যুদ্ধের পরে পৃথিবীর এক ভয়ংকর বিকৃত চেহারা– সে এক অবারিত বিকৃতির নরক!

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement