ছবি: সোশাল মিডিয়া
নিজেরটা যেমন বুঝে নিতে পারেন তেমন অন্যের অধিকারের প্রতি শ্রদ্ধাও রয়েছে, বললেন অভিনেতা অনির্বাণ চক্রবর্তী। শুনলেন বিদিশা চট্টোপাধ্যায়।
আপনার নতুন ছবি আসছে, ‘স্বার্থপর’। এই ছবিতে আপনি একজন আইনজীবীর চরিত্রে!
…হ্যাঁ, এই ছবিতে আমি ‘তারক সরখেল’। চরিত্রটা যখন প্রথম শুনি তখন আমার মনে কিছু প্রশ্ন এসেছিল এই চরিত্র সম্পর্কে। এই মানুষটাকে আমরা কোর্টরুমে দেখব, কিন্তু তার বাইরে এ কেমন সেটা বোঝার যথেষ্ট সুযোগ পাচ্ছিলাম না। এই চরিত্রটা অনেক রকমভাবে পোর্ট্রে করা যেতে পারত…
মানে আপনি বলতে চাইছেন ‘তারক সরখেল’-কে ভিলেনও বানিয়ে দেওয়া যেতে পারে…
…হ্যাঁ, সেরকম একটা জায়গা ছিল, যেখানে পুরোপুরি নেগেটিভ আলোয় তুলে ধরা যেতে পারত। আমার কাছে ‘তারক’ একজন চূড়ান্ত পেশাদার। চিত্রনাট্যে, দাদা-বোনের সংঘাতে যেমন দুজনের পক্ষেই যুক্তি আছে তেমন আদালতে দুজন আইনজীবী যখন কথা বলছে, সেখানেও লজিক আছে। পরিচালককে জিজ্ঞেস করেছিলাম ‘তারক’কে কি নেগেটিভ আলোয় দেখাতে চাও? কেন? সে তো পেশাদার হিসেবে একটা কাজ করছে। ‘তারক’ একেবারে ‘নো-ননসেন্স’ একজন মানুষ, কাজের সঙ্গে ইমোশন গুলিয়ে ফেলে না।
‘তারক সরখেল’ সম্পর্কে সোশাল মিডিয়াতে লিখেছেন, ‘নিজের অংশ কড়ায় গণ্ডায় বুঝে নিতে পারে’। নিজেরটা বুঝে নেওয়া খারাপ নয়, কিন্তু বাঙালি মূল্যবোধে এ বিষয়টা একটু যেন নেতিবাচকভাবেই দেখা হয়!
…হ্যাঁ, ঠিকই, এটা কিন্তু খারাপ নয় একেবারেই। আমরা কি নিজেদের কাজের জায়গায়, মাইনে বা রেমুনারেশনটা হাতছাড়া করি? আমি এটাকে নেতিবাচক হিসেবে দেখি না। আমি স্পষ্ট কথা বলি, সব ব্যাপারে হয়তো ভোকাল নই, কিন্তু যেটা বলতে চাই, বলতে পারি। সেটাকে কে কীভাবে নেবে সেটা আমার দায়িত্বের মধ্যে পড়ে না।
আপনি নিজেরটা কড়ায়-গণ্ডায় বুঝে নিতে পারেন?
… ‘তারক সরখেল’ পারে। অনির্বাণ চক্রবর্তী এই বুঝে নেওয়ায় বিশ্বাসী। আমি বেশিরভাগ সময়ই পারি।
অনির্বাণ চক্রবর্তী অভিনেতা হিসেবে, না কি মানুষ হিসেবে বেশি স্বার্থপর?
…আমার নিজেকে কোনও ক্ষেত্রেই স্বার্থপর বলে মনে হয় না। নিজেই নিজেকে সার্টিফিকেট দেওয়ার মানে হয় না। নিজেকে ‘বিনয়ী’ বললে তো আর ‘বিনয়ী’ হওয়া যায় না। তবে স্বার্থপরের যে সংজ্ঞা আমার মনে হয় না, আমি তার মধ্যে পড়ি। কারণ আমার মধ্যে হিংসা নেই, কারও প্রতি জেলাসি কাজ করে না, তা সে কাজের ব্যাপারে হোক বা অন্য কোনও ব্যাপারে হোক। আমি নিজেরটা যেমন বুঝি তেমন অন্যের অধিকারটাও বুঝি।
এই যে একটু আগে বললেন ‘তারক সরখেল’ পুরোপুরি ভিলেন কি না, এই নিয়ে প্রশ্ন জেগেছিল। যদি আপনাকে তেমন ভিলেনের চরিত্র অফার করা হয়, আপনি কী ভাববেন?
…না, না, নিষ্ঠুর, হিংস্র ভিলেনের চরিত্রে অভিনয় করতে আমার কোনও সংশয় নেই। এই চরিত্রটা তো তেমন নয়। একে নানাভাবে পোর্ট্রে করা যেত, পরিচালক-চিত্রনাট্যকার কীভাবে ভাবছেন সেটাই বোঝার চেষ্টা করছিলাম। আর আমার পছন্দ হল এমন নেগেটিভ চরিত্র যার মনস্তত্ত্বে হিংস্রতা আছে। মানে হাতেকলমে রক্তপাত করে এক ধরনের হিংস্রতা দেখানো যায়, আবার সেটা না করেও হিংস্রতা দেখানো যায়। আমাকে সেই ধরনের চরিত্র অনেক বেশি টানে যার মধ্যে হিংস্রতা আছে অভ্যন্তরীণ স্তরে।
রঞ্জিত মল্লিকের সঙ্গে কাজ করার অভিজ্ঞতা কেমন?
…এই ছবিতে আমরা প্রতিপক্ষ। ফলে সংঘাত আছে। ছবিতেও দুজনকে দুজন চেনে, জানে। এটা ওঁর সঙ্গে আমার প্রথম কাজ। এবং আমি ওঁকে দেখে মুগ্ধ হয়ে গিয়েছি। এত ভদ্র, মিতভাষী, এবং অন্য মানুষকে যেভাবে সম্মান দেন ভাবাই যায় না। একেবারে নতুন পরিচালক এবং একজন ভেটেরান অভিনেতা হয়ে যেভাবে পরিচালকের কাছে সমর্পণ করলেন, অভাবনীয় এবং শিক্ষণীয়। আমার মতো একজন অভিনেতা যে সবে শুরু করেছে, তাকে এত প্রশংসা করেছেন, কী বলব! আমার খুব আফসোস এই বাঙালি ভদ্র-বিনয়ী জেনারেশনটা– বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। ওঁদের পরে আর কেউ নেই। আমরা এভাবে ভাবতে পারি না, এতটা নম্র হতে পারি না।
অনির্বাণ চক্রবর্তী মানেই ‘একেন বাবু’ এটা এখন সময়ের সঙ্গে খানিকটা ফিকে হয়ে
এসেছে কারণ আপনি নানাধরনের চরিত্রে অভিনয় করছেন। এতে আপনি খুশি?
…এটাতে আমি খুবই খুশি। ‘একেন বাবু’ নিশ্চয়ই একটা ভালোবাসার জায়গা। দর্শকদের একটা উন্মাদনা আছে। বিশেষ করে বাচ্চাদের মধ্যে। তারা হয়তো আমার অন্য অভিনয় সেভাবে দেখেনি কারণ সেটা ছোটদের জন্য নয়। আমি তো অভিনেতা হিসাবে চাইবই যে নানা চরিত্রে অভিনয় করতে। আর আমি সৌভাগ্যবান যে আমি সেই সুযোগটা পেয়েছি।
অনির্বাণ চক্রবর্তী এখন কতটা ব্যস্ত। প্রায়ই অফার ফিরিয়ে দিতে হচ্ছে।
…সে তো বহু অফার ‘না’ বলেছি। কিন্তু সেটা এখন বলে নয়, যখন কাজ কম ছিল তখনও আমার যা এসেছে সব করেছি এমন নয়। এখন আবার পরপর কাজ আছে।
তার মানে এ বছরে আপনার ডেট নেই?
…অক্টোবর, নভেম্বর, ডিসেম্বর, জানুয়ারি, ফেব্রুয়ারিতে কাজ আছে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
নিয়মিত খবরে থাকতে ফলো করুন
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.