সিনেমার জীবনদর্শন নিয়ে মুখ খুললেন সংবাদ প্রতিদিনের কাছে শুনলেন বিদিশা চট্টোপাধ্যায়।
‘ডেথ ইন দ্য গঞ্জ’-এর সময় কথা বলার পর প্রায় ৭-৮ বছর কেটে গিয়েছে। এখন আপনার জীবনে অনেকটাই পরিবর্তিত। দারুণ সফল! কেমন লাগে?
… হ্যাঁ, ভালো লাগে, নার্ভাসও লাগে! সত্যিই আমার জীবন ব্যক্তিগতভাবে, পেশাগত দিক থেকে এতটা বদলে গিয়েছে ভাবাই যায় না। আসলে আমাদের চারপাশের পৃথিবীটাই বদলে গিয়েছে।
সাফল্য কীভাবে দেখেন?
…সত্যি বলব? আমি ঠিক জানি না। মানে এর উত্তর নেই। ভালো লাগা থাকলেও এমনও দিন থাকে যখন সাফল্য নিয়ে বেশি ভাবি না, কনশাসলি সেটা থেকে নিজেকে বিযুক্ত রাখি। জীবনে পেশাগত সাফল্যের থেকেও বেশি অনেক কিছু আছে। আমার কাছে এর নির্দিষ্ট উত্তর নেই। তবে হ্যাঁ, লোকে যখন বলে, আপনার ছবির জন্য অপেক্ষা করি সেটা আনন্দ দেয় আবার নার্ভাসও করে দেয়।
গত বছর ব্রেক ঘোষণার পর এক-দেড় মাসের মধ্যে ‘আঁখো কি গুস্তাখিয়া’-র কাজ শুরু করেন। যেটা ১১ জুলাই মুক্তি পাচ্ছে। ধরা যেতে পারে আপনার ব্রেক ওভার। ছবিটা করতে রাজি হলেন কেন?
…ওয়েল আমি যখন ব্রেক ঘোষণা করি, তখন এই ছবিটা অলরেডি সাইনড, তখন বলেওছিলাম যে কমিট করা কাজগুলো করব শুটিংয়ের পর। পাঁচ-ছয়মাস কেটে গিয়েছে। আই থিংক যথেষ্ট ব্রেক হয়েছে। আর এই ছবিকে হ্যাঁ বলার কারণ, স্ক্রিপ্টটা ভালো লেগেছিল। রাসকিন বন্ডের গল্প নির্ভর। এইরকম প্রেমের ছবি আমি আগে বড় পর্দার জন্য করিনি। বেশ ইনটেন্স এবং গাঢ়। আর এই ছবির টিমের সঙ্গে আগে ‘ফরেনসিক’-এ কাজ করেছি। প্রযোজক মানসি এবং বরুণের সঙ্গে কাজের অভিজ্ঞতা ভালো। প্রযোজনার পাশাপাশি মানসি এই ছবির সহ-লেখকও। পরিচালক ‘সন্তোষ সিং’ আমার বন্ধু, ওর সঙ্গে ‘ব্রোকেন বাট বিউটিফুল’-এও কাজ করেছি।
আপনি নিজে কতটা রোমান্টিক?
…এর উত্তর তো আমার বউ দিতে পারবে! আমি জানি না, হতেও পারি। তবে হ্যাঁ, কনভেনশনালি রোমান্টিক বলতে যা বোঝায়, আমি সেটা নই। হাতে ফুল নিয়ে, ক্যান্ডেল লাইট ডিনারে যাব, তেমন রোমান্টিক আমি না।
আপনার ঠাকুরদা অভিনেতা ছিলেন। পার্শ্বচরিত্রে বেশি অভিনয় করেছেন। আপনি নিজে পার্শ্বচরিত্রে অভিনয় দিয়ে শুরু করেছিলেন। আর ২০২৫-এ দাঁড়িয়ে শানায়া কাপুরের ডেবিউ ছবিতে মেল লিড। কারণ আপনি একজন ব্যাংকেবল অভিনেতা!
…এতটা একসঙ্গে ভেবে দেখিনি। আমি এমন কিছুও করে ফেলিনি। আমার জার্নি সবে শুরু হয়েছে। তবে হ্যাঁ, পিছন ফিরে তাকালে জীবনের প্রতি কৃতজ্ঞতাবোধ হয়। শানায়া বা অন্যান্য নিউকামারের সঙ্গে কাজ করা যথেষ্ট সম্মানের, কারণ পরিচালক, প্রযোজক অভিনেতা হিসাবে আমার উপর নির্ভর করতে পারছেন। দায়িত্ব দিতে পারছেন। আর এটাই যদি সাফল্য হয় তা হলে সেটা নিয়ে বেশি ভাবি না, কাজটাতেই মন দিই।
‘টুয়েলভথ্ ফেল’-এর সাফল্যের পরপরই ‘সেক্টর থার্টি সিক্স’-এর মতো ডার্ক ছবি কোনও অভিনেতা করতে চাইতেন কি না সন্দেহ আছে। আপনি করেছেন। নিজের গভীরের কোন অন্ধকার খুঁড়ে এনে এমন অভিনয় করলেন?
…‘সেক্টর থার্টি সিক্স’ করার সময় আগে থেকেই ঠিক করেছিলাম, এই ছবিটা যাতে ব্যক্তিগত জীবনে প্রভাব বিস্তার না করে। ‘ডেথ ইন দ্য গঞ্জ’ আর ‘টুয়েলভথ্ ফেল’ আমাকে এতটাই ডিসটার্ব এবং প্রভাবিত করেছিল যে এইবার খুব সাবধান ছিলাম। ‘সেক্টর থার্টি সিক্স’ যখন সাইন করি তখন আমার সদ্য বিয়ে হয়েছে। একেবারে অন্য হেড স্পেসে ছিলাম। খুব ভালোভাবেই জানতাম এই ছবির অন্ধকার মন নিয়ে সেট থেকে সদ্য বিয়ে হওয়া সংসারে ফিরতে পারব না। বন্ধুদের নিয়ে, নানাভাবে নিজেকে ব্যস্ত রেখেছিলাম, সেটা সাধারণত কোনও ছবি করার সময় আমি করি না। ‘বাট দিস ওয়াজ টু ডার্ক টু ব্রিং হোম’। আর ছবিটা যখন মুক্তি পায় তখন আমার ছেলের জন্ম হয়।
ক্রমাগত অন্ধকার আর আলোর মধ্যে যাতায়াত, বেশ কঠিন!
…হ্যাঁ, কঠিন। আর সেটাই পেশাদার অভিনেতার কাজ। এইজন্যই সে টাকা পায়। বাট চরিত্রটা নিয়ে আমি বলতে চাই। আমি তো আর সিরিয়াল কিলার নই। তবে আমি মনে করি মানুষের মধ্যে নৃসংশতা থাকে। আমাদের সবার মধ্যে রামও আছে, রাবণও আছে। কে কেমন এনার্জি ব্যবহার করবে, তার ওপর নির্ভর করছে। আমরা সেবাও করতে পারি, দরকার পড়লে মানুষ খুনও করতে পারি। হিউম্যান ক্যাপাসিটি সীমাহীন। আর সেই কারণেই ‘প্রেম সিং’ আমার নিজের করা অন্যতম প্রিয় চরিত্র, মানুষের সাইকির রেঞ্জ টের পাওয়া যায়। আর অভিনেতার এটাই মজা। জীবনের নানা স্পেকট্রামে পৌঁছে সেই জীবন বেঁচে আসতে পারে– পুলিশ, সমাজকে কৈফিয়ত না দিয়েই।
শুনেছি আপনি মধ্যবিত্ত পরিবার থেকে উঠে এসেছেন। নিজের তৈরি করা অর্থ-খ্যাতি কী আপনাকে সেই মধ্যবিত্ত শিকড় থেকে উপড়ে ফেলতে পেরেছে?
…একেবারেই না। বরং বলতে চাই আমি খুব সচেতনভাবে বারবার শিকড়ে ফিরে যাই। চেষ্টা করি মাটির কাছাকাছি থাকতে। আমার যাপন বদলায়নি। বাইরের সাফল্য যতই আসুক বারবার নিজেকে রিসেন্টার করা জরুরি। ব্যক্তি হিসাবে তো বটেই, অভিনেতা হিসাবেও।
আপনার কী মনে হয় এই সময়ে দাঁড়িয়ে একজন সেন্সিটিভ অভিনেতার প্রোপাগান্ডা ফিল্ম করা উচিত নয়?
…না, তা কেন! সব ধরনের গল্প বলা হোক। আসলে এটা আমাদের মাথায় ঢুকে গিয়েছে। আপনি সবাইকে খুশি করতে পারবেন না। নিজের ইন্সটিংক্ট এবং বিশ্বাসের ওপর ভিত্তি করে যেটা মনে হয় সেটাই করা উচিত।
আর্টের জগতে যেখানে এক্সপ্রেস করাই কাজ, সকলের অধিকার আছে নিজের মতো করে এক্সপ্রেস করার। প্রোপাগান্ডা ফিল্ম বলতে সেই সব ছবির কথা বলছি, যেটা কোনও না কোনও রাজনৈতিক দলের সুবিধার্থে তৈরি!
…প্রোপাগান্ডা কী? কাকে বলে? আমার রিয়্যালিটি তোমার প্রোপাগান্ডা, তোমার রিয়্যালিটি আমার প্রোপাগান্ডা! বাট হাউ অ্যাম আই এনিবডি টু জাজ ইওর রিয়্যালিটি অ্যাজ প্রোপাগান্ডা? অ্যাটলিস্ট আই ডোন্ট অ্যালাও মাইসেলফ টু থিংক দ্যাট ওয়ে। যেটা আপনার জীবনের সত্যি সেটা আপনার সত্যি, সেটা আমার প্রোপাগান্ডা মনে হতে পারে, কিন্তু সেটা আমি আপনাকে বলার কে! কিন্তু যদি আপনার দৃষ্টিভঙ্গি কোনও একজন ব্যক্তির জন্য বদলে যায় তা হলে সেটা আপনার সমস্যা!
আপনি বলেছিলেন, অভিনেতাদের সোশাল ওয়ার্কারের আসনে বসানো উচিত নয়। অনেক অভিনেতা রাজনীতিতে যোগ দেন। রাজনীতিবিদরাও এক ধরনের সোশাল ওয়ার্কার। আপনি কখনও পলিটিক্স-এ যাবেন?
…আমি বলব, নেভার সে নেভার। আমি জয়েন করতেও পারি, নাও করতে পারি। আমি শুধু নিজের কথা বলতে পারি। আমি পেশায় অভিনেতা, কিন্তু পেশা বাদ দিলেও আমি আরও অনেক কিছু। কাল যদি সমাজ আর আমার চারপাশের পৃথিবীর ভালোর জন্য কিছু করার সুযোগ তৈরি হয়, তা হলে কেন নয়? বহু বিজনেসম্যান, স্পোর্টসম্যান যারা পলিটিশিয়ান। আমার একটাই সমস্যা হয় আজকের জেনারেশনের অল্পবয়সিদের নিয়ে তারা পলিটিক্স এবং সোশাল ওয়েলফেয়ারকে ভালো চোখে দ্যাখে না। কোনও ছাত্র যদি বলে যে সে রাজনীতি করতে চায় তার উপর আগে থেকেই ‘কোরাপট’ হওয়ার লেবেল সেঁটে দেওয়া হয়। যেন পলিটিক্স-এ যাওয়া মানেই ঘুষ খাওয়া আর কোরাপশন। এই পেশাকে খুব ছোট করে দেখা হয়– এটা উচিত নয়। যদি আমি মনে করি আমি সমাজের ভালোর জন্য কিছু কনট্রিবিউট করতে পারব, আমি রাজনীতি করব।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
নিয়মিত খবরে থাকতে ফলো করুন
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.