রমণী বিশ্বাস, তেহট্ট: উত্তর দিনাজপুরের তুলাইপাঞ্জি চালের খ্যাতি রয়েছে গোটা বিশ্বেই। স্বাদে এবং গুণে এই চাল অতুলনীয়। এবার সেই তুলাইপাঞ্জি ধানের চাষ শুরু হল নদিয়ার তেহট্টে। পরীক্ষামূলকভাবে এই ধানের চাষ শুরু হয়েছে। এরপরেই এই ধান চাষ সম্পর্কে খোঁজখবর নিতে শুরু করেছেন অন্যান্য চাষিরাও। এমনকী কৃষি দপ্তরের তরফেও এই চাষের বিষয়ে খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে।
তেহট্ট থানার বেতাই উত্তরজিতপুর গ্রামের বাসিন্দা, পেশায় কৃষক রনিত বিশ্বাস এই তুলাইপাঞ্জি ধানের চাষ শুরু করেছেন। তিনি জানান, ”ডঃ বি আর আম্বেদকর কলেজের অধ্যাপক- প্রহ্লাদ বিশ্বাসের কাছ থেকে এই ধান সম্পর্কে প্রথম জানতে পারি। এরপরেই প্রাথমিকভাবে ৫ কাঠা জমিতে এই চাষে আগ্রহী হই।” এক্ষেত্রে রনিত বিশ্বাসকে অনেকটাই সাহায্য করেছে গুগল! তাঁর কথায়, ”গুগল সার্চ করে এই ধান সম্পর্কে অনেক কিছু জানতে পারি। অধ্যাপক- প্রহ্লাদ বাবুর বাড়ি রায়গঞ্জের ওই এলাকায় হওয়ার কারণে স্যারকে অনুরোধ করি, কিছুটা পরিমাণ তুলাইপাঞ্জি ধানের বীজ সংগ্রহ করে দিতে। আমার অনুরোধ প্রহ্লাদবাবু ফেলতে পারেননি। তিনি প্রায় দুই কেজি ধানের বীজ বিনামূল্যে রায়গঞ্জ থেকে আমাকে নিয়ে এসে দেন।”
এই ধান মূলত নন বাসমতি অ্যারোমেটিক রাইস। ইন্ডিয়ান সুগন্ধি চাল বলতে পৃথিবী খ্যাত বাসমতি কিন্তু বাসমতির পাশাপাশিও যে ভারতবর্ষে অন্যান্য সুগন্ধি এবং পুষ্টিগুণ সম্পূর্ণ চালের যে প্রজাতি আছে তার মধ্যে অন্যতম একটা চাল হচ্ছে এই তুলাইপাঞ্জি। ইতিমধ্যে এই চাল সারা পৃথিবীতে খ্যাতি অর্জন করেছে। এই চালের ভাত সুগন্ধি এবং স্বাদ ও পুষ্টিগুনে ভরপুর। এই ধানটা মূলত চাষ হয় উত্তর দিনাজপুরের রায়গঞ্জ মহকুমার রায়গঞ্জ ব্লকে। আর এই ব্লকে যে জায়গাটিতে সবচাইতে বেশি চাষ হয় সেই জায়গাটির নাম ‘মোহিনীগঞ্জ’।
রনিত বিশ্বাস জানিয়েছেন, ”রায়গঞ্জের পার্শ্ববর্তী যে ব্লক গুলো আছে যেমন কালিয়াগঞ্জের কিছুটা অংশে, হেমতাবাদ এবং ইটাহার ব্লকের কিছুটা অংশে এই ধানের চাষ হয়। এই ধানের চাষটা মূলত ভাদ্র মাসের মাঝামাঝি সময়ে অন্য ধানের অনেক পরে চারা রোপন করতে হয়, এবং বর্ষার বৃষ্টি বন্ধ হওয়ার পরে এই ধানের শিষ বের হবে, এটাই হচ্ছে এই ধান চাষের প্রকৃতিগত বৈশিষ্ট্য।” তাঁর কথায়, এই চাল খুব সুগন্ধি এবং সহজপাচ্য, খুব দ্রুত এই চালের ভাত হজম হয়। ভারতের বাইরেও এই চালের প্রচুর পরিমাণে চাহিদা রয়েছে।
অন্যদিকে অধ্যাপক প্রহ্লাদ বিশ্বাস জানিয়েছেন, ”উত্তর দিনাজপুরের রায়গঞ্জ মহকুমার রায়গঞ্জ ব্লকের যে জায়গাটিতে সবচাইতে বেশি চাষ হয় সেই জায়গাটির নাম “মোহিনীগঞ্জ”। এছাড়াও পারিপার্শ্বিক ব্লকের কোথাও কোথাও এই চাষ হয়।” অধ্যাপকের কথায়, ”তুলাইপাঞ্জি ধানের চালের ভাত সুগন্ধি, সহজ পাচ্য পুষ্টিগুণ সম্পন্ন, এবং চাষের পদ্ধতির দিক থেকে এই চাষ একটু লেট ভ্যারাইটি। এই চাষটা শুরু হবে যখন বর্ষা প্রায় বিদায়ের দিকে এবং বৃষ্টির ফোঁটা যখন শীষে পরবে না, তখন এই ধানের শীষ বের হবে এবং ধানের শিষে প্রচুর পরিমাণে কোয়াশা পড়বে তাহলেই এই চালের সমস্ত গুণগতমান ঠিক থাকবে।” শুধু তাই নয়, এই ধান চাষে জমি ভেজা থাকবে অথচ জমিতে কোনও জল থাকবে না, এইভাবে মূলত তুলাইপাঞ্জি ধানের চাষ হয়।
এই ধান মূলত তিন মাসের ফসল, অন্যান্য ধানের তুলনায় ফলন খুব কম। তবে এই ধান চাষে রাসায়নিক সার কিংবা কীটনাশক ব্যবহার সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ , এগুলি ব্যবহার করলে এর যে সুগন্ধি, পুষ্টিগুণ এবং এই চালের যে যে বৈষুষ্টিগুলি আছে সেগুলি অনেকাংশে কমে যায়। তেহট্ট -১ ব্লকের কৃষি আধিকারিক আনন্দ মিত্র জানিয়েছেন, ”খুব ভালো উদ্যোগ, এর আগেও দক্ষিণবঙ্গের কোন এক জায়গায় এই চাষ হয়েছিল, সেই চালের গুণগত মান ঠিক না থাকায় বাণিজ্যিকভাবে সেই চাষ বন্ধ হয়ে যায়। দীর্ঘদিন পর আবারও তুলাইপাঞ্জি ধান চাষ শুরু হয়েছে।” দপ্তরের তরফ বিষয়টি খতিয়ে দেখতে চাষ খতিয়ে দেখতে যাওয়া হবে বলেও জানিয়েছেন আনন্দ মিত্র। তাঁর কথায়, ”দপ্তরের পক্ষ থেকে আমরা জমিতে পরিদর্শনে যাব। ধানের চালের ভাতে যদি সুগন্ধি এবং গুণগতমান যদি সঠিক থাকে তাহলে আমাদের এই এলাকায় বাণিজ্যিকভাবে এই ধানের চাষ করে লাভবান হবেন চাষিরা।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
নিয়মিত খবরে থাকতে ফলো করুন
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.