তেলেঙ্গানা প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি মহেশকুমার গৌড়।
সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: সংঘর্ষবিরতির দাবিকে কার্যত ফুঁৎকারে উড়িয়ে মাওবাদীদের শিকড় উপড়ে ফেলতে কোমর বেঁধে নেমেছেন অমিত শাহ। শুরু হয়েছে ‘অপারেশন কাগর’। প্রায় প্রতিদিন একের পর এক মাওবাদী কমান্ডারের মৃত্যুর খবর আসছে। সরকার যখন লক্ষ্যপুরণের দোরগোড়ায় ঠিক সেই সময় এই অভিযানের বিরোধিতায় সরব হলেন তেলেঙ্গানা প্রদেশ কংগ্রেসের সভাপতি মহেশকুমার গৌড়। এই অভিযান বন্ধের আর্জি জানিয়ে জানালেন, ‘মাওবাদীরাও দেশের নাগরিক। যারা গরিব মানুষের বিরুদ্ধে হওয়া সামাজিক অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়াই করেন। এই অবস্থায় মাওবাদীদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নয়, বরং সাংবিধানিক পথে সমস্যা মেটানো উচিত।’
এক সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তেলেঙ্গানার কংগ্রেস সভাপতি মহেশ বলেন, “জীবনের অধিকার এক মৌলিক অধিকার। কাউকে সেই অধিকার থেকে বঞ্চিত করা সংবিধান বিরোধী। কিন্তু অপারেশন কাগর-এর নামে এটা কী হচ্ছে? কংগ্রেস সন্ত্রাসবাদকে সমর্থন করে না, সেটা মাওবাদীদের তরফ থেকে আসুক বা সরকারের তরফ থেকে। কংগ্রেসের মূল ভিত্তি অহিংসা। সরকারের কাছে অনুরোধ, তারা যেন আলোচনার জন্য অগ্রসর হয়। কারণ যারা অস্ত্র ছেড়ে সমাজের মূল স্রোতে আসতে চান, আত্মসমর্পণ করতে চান তাঁদের সেই সুযোগ দেওয়া হোক। সরকার কেন শান্তি আলোচনার পথে হাঁটতে দ্বিধাবোধ করছে।”
একইসঙ্গে তিনি বলেন, “জঙ্গলের মধ্যে অসংখ্য নাগরিকের বাস। তাঁরা সকলে আদিবাসী। সেখানে হাজার হাজার নিরাপত্তারক্ষী মোতায়েন করা হয়েছে। তাঁদের গুলিতে যদি সাধারণ আদিবাসীর মৃত্যু হয় তাহলে কী হবে?” রাজনৈতিক মহলের দাবি, সাম্প্রতিক একাধিক ঘটনার প্রেক্ষিতেই এই উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন মহেশ। বর্তমানে ছত্তিশগড়, মহারাষ্ট্র ও তেলেঙ্গানা সীমানা ঘেঁষা কারেগুট্টা পাহাড়ি এলাকা মাওবাদীদের অন্যতম শক্তঘাঁটি। এই এলাকা থেকে মাওবাদের শিকড় উপড়ে ফেলতে প্রায় ৩ হাজার আধাসেনাকে নামানো হয়েছে। গোটা পাহাড় ঘিরে চলছে অভিযান। অভিযোগ উঠেছে মাওবাদীদের বিরুদ্ধে চলা অভিযানে বেশ কিছু সাধারণ নাগরিকেরও মৃত্যু হয়েছে। তালিকায় রয়েছে নাবালক কিশোরও। যার জেরে প্রশ্ন উঠেছে সরকারের এই অভিযান নিয়ে।
নিরাপত্তাবাহিনীর লাগাতার অভিযানের জেরে সম্প্রতি একাধিকবার মাওবাদীদের তরফে সংঘর্ষবিরতির আর্জি জানানো হয়েছে সরকারের কাছে। যদিও সেই আর্জি নিয়ে কোনও উচ্চবাচ্য করেনি সরকারপক্ষ। এই প্রেক্ষিতে মহেশ বলেন, “কংগ্রেস শুরু থেকে অপারেশন সিঁদুরে সরকারের পক্ষে সমর্থন দিয়েছে। কিন্তু হঠাৎ সংঘর্ষবিরতি ও ভারত-পাক দ্বিপাক্ষিক বিষয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নাক গলানোর বিরোধিতা করেছি। ফলে পাকিস্তানের সঙ্গে যদি সংঘর্ষবিরতি হতে পারে তাহলে আমাদের নিজের নাগরিকদের সঙ্গে শান্তি আলোচনায় সমস্যা কোথায়? মাওবাদীরা এই দেশের নাগরিক। ওঁরা গরিব মানুষের বিরুদ্ধে হওয়া সামাজিক অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়াই করেন। যার জেরেই তাঁদের সঙ্গে সংঘর্ষবিরতির পক্ষে আলোচনার আর্জি জানাচ্ছি।”
অবশ্য কংগ্রেস সভাপতির এই শান্তি আলোচনার আর্জিকে ওয়াকিবহালমহল যুক্তিসঙ্গত বলে মানলেও, অতীতে সরকারের তরফে এমন পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি তা কিন্তু নয়। একাধিকবার মাওবাদীদের সঙ্গে শান্তি আলোচনা করেছে সরকার। আর্জি জানিয়েছে অস্ত্রত্যাগের। যদিও বারবার সেই শান্তি ভঙ্গ করা হয়েছে মাওবাদীদের তরফে। লাগাতার ব্যর্থ হওয়ার পর এবার দেশ থেকে মাওবাদ শেষ করার টার্গেট বেঁধে দিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। ২০২৬ সালের মে মাসের সেই লক্ষ্য নিয়ে মাঠে নেমেছে কেন্দ্রীয় বাহিনী। তবে সেই অভিযানের বিরোধিতায় এই প্রথম কোনও রাজনৈতিক দল প্রকাশ্যে মুখ খুলল।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
নিয়মিত খবরে থাকতে ফলো করুন
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.