অর্ণব আইচ: ৭ অক্টোবর ভোর প্রায় সাড়ে পাঁচটা। রাজস্থানের কুচমন থানা এলাকায় একটি জিমে ঢুকে ব্যবসায়ী রমেশ রুলানিয়াকে খুন চার দুষ্কৃতীর। খুব কাছ থেকে পরপর তিনটে গুলি চালায় তারা। রক্তাক্ত অবস্থায় মাটিতে লুটিয়ে পড়েন বাইক শোরুম ও হোটেলের মালিক রুলানিয়া। পুলিশকে খবর দেয় জিম কর্তৃপক্ষ। তাঁকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকরা মৃত বলে ঘোষণা করেন। এই ঘটনার পর হুলস্থূল পরে যায় কুচমন জেলাজুড়ে। অভিযুক্তদের খোঁজে তল্লাশি শুরু করে পুলিশ। বুধবার ধৃতদের খোঁজ দিতে পারলে ১ লক্ষ টাকা পুরষ্কার ঘোষণা করে পুলিশ। সেই চারজনের মধ্যে ৩ জনকে বৃহস্পতিবার রাতে গ্রেপ্তার করেছে কলকাতা পুলিশ।
তদন্তে নেমে রাজস্থান পুলিশের প্রাথমিক অনুমান, রমেশ হত্যাকাণ্ডের পিছনে হাত রয়েছে কুখ্যাত গ্যাংস্টার রোহিত গোদারা ও তার সহযোগী বীরেন্দ্র চরণের। কে এই রোহিত? রাজস্থান পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, বিকানের কুখ্যাত গ্যাংস্টার রোহিত গোদারা। ২০২২ সালের ডিসেম্বরে সিকারে গ্যাংস্টার রাজু থেহাট খুনে এই রোহিত মূল ষড়যন্ত্রকারী বলে সন্দেহ পুলিশের। এছাড়াও ২০২২-এর মে মাসে জনপ্রিয় পাঞ্জাবি গায়ক সিধু মুসেওয়ালা হত্যাকাণ্ড ও ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে করণী সেনা প্রধান সুখদেব সিং গোগামেদি খুনেও রোহিতের নাম উঠে আসে। এই দু’টি খুনের দায়ও স্বীকার করেছিল রোহিত। কিন্তু কেন খুন হলেন ব্যবসায়ী রুলানিয়া?
বেশ কয়েকদিন থেকেই রুলানিয়ার কাছে টাকা দাবি করে হুমকি ফোন আসছিল। শুধু রুলানিয়া নয়, অনেক ব্যবসায়ীরাও সেই হুমকি ফোন পেয়েছিল। সেই টাকা না পেয়ে রোহিতের গ্যাংয়ের সদস্যরা ব্যবসায়ীকে খুন করেছে বলে অনুমান পুলিশের।
রাজস্থান পুলিশ সূত্রে আরও জানা গিয়েছে, স্টেশন রোড এলাকার ওই জিমে সকাল ৫টা ৩০ নাগাদ যান রমেশ। তারপরই মুখ ঢেকে ভিতরে প্রবেশ করে চার দুষ্কৃতী। খুন করে পালিয়ে যায়। সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করে তদন্তে নামে পুলিশ। প্রথমে তাদের মাথার দাম ২৫ হাজার টাকা ঘোষণা করে পুলিশ। পরে সেই পুরষ্কার মূল্য বাড়িয়ে ১ লক্ষ টাকা করা হয়। কিন্তু কোনও খোঁজ মিলছিল না। এরমধ্যেই দুষ্কৃতীরা পালিয়ে এসেছে কলকাতায়। রাজস্থানের এডিজি (অপরাধ) দীনেশ এমএন বলেন, “দিদোয়ানা-কুচামনের এসপি রিচা তোমার আগে চার অভিযুক্তের জন্য ২৫,০০০ টাকা করে পুরস্কার ঘোষণা করেছিলেন। পরে সেই পরিমাণ বাড়ানো হয়।” ধৃতদের রাজস্থানে নিয়ে গিয়ে বাকি তদন্ত এগিয়ে নিয়ে যাওয়া হবে বলে পুলিশ সূত্রে খবর।
উল্লেখ্য, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় কাদাপাড়া ফুলবাগান এলাকার স্থানীয়রা পুলিশকে জানান, তিন সন্দেহভাজনকে এলাকায় ঘুরে বেড়াতে দেখা যাচ্ছে। দ্রুত ফুলবাগান থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছয়। তিন অভিযুক্ত তদন্তকারীদের মিথ্যে গল্প বলার চেষ্টা করে। কিন্তু অচিরেই পুলিশের কাছে স্পষ্ট হয়ে যায় মিথ্যে বলছে তারা। কার্যতই এরপর ‘কেঁচো খুঁড়তে কেউটে’ বেরিয়ে পড়ে। পুলিশ জানতে পারে রাজস্থানের কুচমন থানা এলাকার ব্যবসায়ী খুনের মামলায় এরা অভিযুক্ত। সূত্রের দাবি, পুলিশের হাত থেকে পালানোর চেষ্টা করে অভিযুক্তরা। দৌড়ে সল্টলেকের পূর্বাচলে একটি আবাসনে ঢুকেও পড়ে। দাবি, প্রথমে পুলিশ কর্তাদের একটি আবাসনের চারতলায় উঠে যায় তারা। কিন্তু নিরাপত্তা রক্ষীদের তাড়া খেয়ে সেখান থেকে পালায়। সল্টলেক বেঙ্গল টেনিস অ্যাকাডেমির কাছে তাদের ধরে ফেলেন আইপিএস কোয়ার্টারের নিরাপত্তায় থাকা পুলিশ কর্মীরা। খবর পেয়ে প্রথমে বিধাননগর থানার পুলিশ, পরে ফুলবাগান থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে যায়। আটক করে ভিনরাজ্যের পলাতক অভিযুক্তদের।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
নিয়মিত খবরে থাকতে ফলো করুন
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.