Advertisement
Advertisement
SSKM

খালি চোখে গোনা যাচ্ছিল একরত্তির পাঁজর! কঙ্কালসার চেহারায় মাংস লাগিয়ে নজির এসএসকেএমের

৬০ দিনের লড়াইয়ের পর বর্তমানে সুস্থ খুদে।

Doctor's of SSKM successfully operates rare surgery | Sangbad Pratidin
Published by: Tiyasha Sarkar
  • Posted:May 2, 2022 9:47 am
  • Updated:May 2, 2022 9:47 am   

স্টাফ রিপোর্টার: হাড় জিড়জিড়ে কঙ্কালসার। বুকের পাঁজর গোনা যাচ্ছিল খালি চোখে। জন্মরুগ্ন সে চেহারায় মাংস লাগাল এসএসকেএম-এর নিউনেটাল বিভাগ।

Advertisement

এক দুই নয়, টানা ৬০ দিনের লড়াই শেষে শুকনো চেহারা এখন ফুটফুটে। পুরুলিয়ার প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে দু’মাসের শিশুপুত্রকে নিয়ে এসএসকেএমে এসেছিলেন মালা দাস। কারণ, অদ্ভুত। কিছু খাওয়া তো দূরের কথা, জন্মের পর থেকে শিশুর ওজন কমছিল মুহুর্মুহু। অস্থিচর্মসার সে চেহারা দেখলে চোখ কপালে উঠবে। সদ্যোজাতকে নিয়ে আসা হয় এসএসকেএম-এর নিওনেটাল বিভাগে।

শারীরিক পরীক্ষা করে চিকিৎসকরা দেখেন একটা নয়, একরত্তিকে আক্রমণ করেছে অগুনতি অসুখ। মৃত্যু যেন শিয়রে। সোডিয়াম পটাশিয়ামের মাত্রা কমে ইলেকট্রোলাইট ইমব্যালেন্স, তার উপর মিকোনিয়াম আইলিয়াস (Meconium ileus)। অর্থাৎ পেটের খাদ্যনালির রস শুকিয়ে গিয়ে জমাট শক্ত। বন্ধ হয়ে গিয়েছিল পেরিস্টালসিস। ডা. দীপঙ্কর রায়ের কথায়, খাবার খাওয়ার পর তা পাচননালি বা ডাইজেস্টিভ ট্র‌্যাক দিয়ে নামতে থাকে। এই সময় ডাইজেস্টিভ ট্র‌্যাকে সঙ্কোচন প্রসারণ হয়। এই নড়াচড়াকেই বলা হয় পেরিস্টালসিস (Peristalsis)। এই পেরিস্টালসিস বন্ধ হয়ে গেলে হজমের দফারফা। যেমনটা হয়েছিল একরত্তির।

[আরও পড়ুন: মাঝ আকাশে ঝড়ের কবলে যাত্রীবাহী বিমান, অন্ডাল বিমানবন্দরে জরুরি অবতরণ]

মায়ের পেটের মধ্যেই ফুটো হয়ে গিয়েছিল শিশুর মলত্যাগের নালি। তরল পায়খানা ছড়িয়ে সমস্ত পেটে মাখামাখি। ক্ষুদ্রান্ত্রের তিনভাগের একটি অংশ জেজুনাম। যা ডিওডেনাম এবং ইলিয়ামের মাঝে অবস্থিত। সেখানেই এসে শেষ হয়ে গিয়েছিল ওই নালি। শিশুকে জীবন দিতে পর পর দুটো অস্ত্রোপচার করা হয়। প্রথমটি ২৪ ফেব্রুয়ারি, অন্যটি ৩১ মার্চ। সবার আগে হয় উচ্চমাত্রার জেজুনোস্টমি। পায়খানা শরীরের বাইরে বেরোতে পারছিল না বলে নল ঢুকিয়ে তা বাইরের বের করার বন্দোবস্ত করা হয়। ডা. দীপঙ্কর রায়ের কথায়, শরীরে রাসয়নিক প্রদাহজনিত অসুখ মিকোনিয়াম পেরিটোনাইটিস ছিল শিশুর। ছিল সদ্যোজাতর মলত্যাগের প্রক্রিয়াকে গড়বড় করে দেওয়ার অসুখ জেজুনাল অ্যাট্রেশিয়া।

মায়ের দুধ খেতে পারছিল না। যা খাচ্ছিল সব বেরিয়ে যাচ্ছিল। সম্পূর্ণ চিকিৎসা চলাকালীন তাই টিপিএন বা টোটাল প্যারেনটেরাল নিউট্রিশন পদ্ধতিতে শিশুটিকে দু’মাস বাঁচিয়ে রাখা হয়। পুষ্টি জুটবে কী করে? এই ৬০ দিন সেন্ট্রাল লাইন করে শিরার মধ্যে দিয়ে খাবার পাঠানো হতো একরত্তির শরীরে। এমন ঘটনা বিরল। বেসরকারি হাসপাতালে এই উপায়ে বাঁচিয়ে রাখার খরচ দিন প্রতি ৫০ হাজার টাকা। দু’মাসে ৩০ লক্ষ টাকা খরচের ধাক্কা সামলানোর মতো অবস্থা নেই দরিদ্র পরিবারের। এসএসকেএম এ বহুমূল্যবান চিকিৎসা হল মাত্র দু’টাকার টিকিটে। ওজন নেমে গিয়েছিল ১ কেজি ৮০০ তে। প্রথম অস্ত্রোপচারের পর দাঁড়ায় দু’কেজি দুশো গ্রামে। আর এখন? প্রতিদিন ১০ গ্রাম করে ওজন বৃদ্ধি পাচ্ছে শিশুটির। ডা. দীপঙ্কর রায়ের কথায়, নিওনেটাল অ্যানাস্থেটিস্ট থেকে নার্সিং স্টাফ, রেসিডেন্সিয়াল চিকিৎসক, একরত্তিকে বাঁচাতে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন সকলে।

[আরও পড়ুন: সামাজিক সুরক্ষা ও পেনশন চালুর দাবি, শ্রম দিবসে প্রতীকী কর্মবিরতিতে যৌনকর্মীরা]

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ