ফাইল ছবি
ধ্রুবজ্যোতি বন্দ্যোপাধ্যায়: কলকাতার কালীপুজোর ভরকেন্দ্র যে আমহার্স্ট স্ট্রিট, সেই ‘পুজো পলিটিক্সে’ এবার চতুর্থ স্তম্ভের পদার্পণ। সোমেন মিত্র, ফাটাকেষ্ট, প্রাক্তন বিধায়ক তাপস রায়ের পুজোর সঙ্গে চলতি কালীপুজোর রাজনীতিতে চতুর্থ স্তম্ভ হিসাবে মাথা তুলেছে তৃণমূল নেতা প্রিয়াল চৌধুরীর পুজো। এবার বহরে বেড়েছে সোমা চৌধুরীর ৩৭ নম্বর ওয়ার্ডে আমহার্স্ট স্ট্রিট সম্মিলিত কালীপুজো।
৪৫ নম্বর আমহার্স্ট স্ট্রিটের উপরে সোমেন মিত্রের বাড়ির সামনে তাঁর সর্বজনীন পুজো। আমহার্স্ট স্ট্রিট কালীপুজো। অন্যদিকে, আমহার্স্ট স্ট্রিট লাগোয়া কেশব সেন স্ট্রিটে ফাটাকেষ্টর কালী নব যুবক সংঘের পুজো। দুই পুজোই ছিল আমহার্স্ট স্ট্রিটের রেষারেষির জায়গা।
‘ছোড়দা’ সোমেন মিত্র যখন দাপটে নিজের পুজো করছেন, সে সময় ফাটাকেষ্টর পুজোর কর্তা প্রবন্ধ রায়ের পুজো উদ্বোধনে এসেছেন কংগ্রেসের তৎকালীন যুবনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আগে যেখানে এই দুই পাড়ায় ছিল পুজোর লড়াই, সেখানে এল রাজনীতি। সেই রাজনীতির দাপটে একদিকে হইহই করে চলেছে সোমেনের পুজো, কিছু পরে আবার ফান্টার পুজোয় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ফান্টাদার কথায়, “এই চত্বরটা কালীপুজোর হাব। আর রাজনীতির ময়দানে নক্ষত্র সমাবেশ হলে তার তো একটা আলাদা গুরুত্ব থাকেই।” সেই পুজোয় এখনও তৃণমূল নেতৃত্বের রমরমা আনাগোনা।
আরও পরে এককালের সোমেন-অনুগামী তাপস রায় নিজের দায়িত্বে নিলেন আমহার্স্ট স্ট্রিটেরই আরেক প্রান্তে যুবশ্রীর কালীপুজো। তাপস রায় তখন আর সোমেন-অনুগামী নন, নিজের মতো করে সংগঠন সাজাচ্ছেন। ফলে পুজো বহরে বাড়ল। পরিচয় আরও বিস্তৃত হল তিনি তৃণমূলে এলে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় গেলেন তাঁর পুজোয়। সেই তাপস রায় এখন বিজেপিতে। স্বাভাবিকভাবেই সেখানে এখন বিজেপির নেতাদের আনাগোনা। তাঁর কথায়, “রাজনীতির মানুষ যখন, আর আমার সেই রাজনীতির যখন একটা পরিচয় আছে, তখন তার তো একটা প্রভাবও থাকবে।” এই তিনটে পুজোই বরাবর রাজনৈতিক তাৎপর্য নিয়ে হত।
এবার সেখানেই চতুর্থ পুজো শুরু করছেন তৃণমূলের প্রিয়াল। প্রিয়াল কার্যত সোমেন মিত্রের পুরনো প্রতিবেশী। পুজোরও অংশ ছিলেন এক সময়। সোমেন মিত্রের পুজো নিয়ে এক সময় কিছু টানাপোড়েন থাকলেও সেই পুজো বর্তমানে য়াঁরা করছেন, তাঁরা কোনওভাবেই পুজোকে প্রিয়ালের নিয়ন্ত্রণে যেতে দিতে চান না। আমহার্স্ট স্ট্রিট পোস্ট অফিসের পাশে যে পুজো হত, সেই পুজোকেই এবার তাই বড় রাস্তায় বড় আকারে তুলে আনলেন প্রিয়াল। নৈহাটির বড়মায়ের মন্দির তাঁর থিম। উদ্বোধনেও থাকছেন হেভিওয়েট তৃণমূল নেতৃত্ব।
ওদিকে সোমেন মিত্রের ভাই বুলবুল মিত্রের পুজো এখন প্রদেশ কংগ্রেসের দু-একজন নেতা নিয়ন্ত্রণ করছেন। থাকছেন সোমেনের স্ত্রী শিখা মিত্র। পুজো নিয়ে লড়াইও কম না। একটা সময় লড়াই হয়ে দাঁড়িয়েছিল সোমেন মিত্রের অনুগামী, বনাম সোমেন মিত্রের স্ত্রী। তিনি এই এলাকার বাসিন্দা না হলেও সোমেন মিত্রের স্ত্রী বলে তাঁর সম্মান বা গুরুত্ব যথেষ্ট। পুজো কার হাতে থাকবে, তাই নিয়ে বিড়ম্বনা ছিলই। জানা যাচ্ছে, ইষ্টবেঙ্গল কর্তা দেবব্রত সরকার সোমেন মিত্রের ‘ভ্রাতৃপ্রতিম’ এই দুই গোষ্ঠীকে নিয়ে একটা ‘জোড়াতালির ঐক্যের ফরমুলা’ করে দিয়েছেন। ফলে তিক্ততা আর বাড়েনি। সোমেন মিত্রের ভাই বলছেন, “এই পুজোয় আমি যতটা, আর যারা গায়-গতরে খেটে পুজো করে তাদেরও পুজো ততটাই। আর কে এই পুজোয় আছে বলতে পারব না। নিতু বরাবর দাদার পাশে থেকেছে।”
সোমেনের পুজোয় এক সময় থাকতেন প্রিয়ালের বাবা, তিনি নিজেও। সেই পুজোয় থাকার আমন্ত্রণও বারবার তিনি পেয়েছেন। কিন্তু মাঝের পর্বে নানা বিড়ম্বনায় সরে আসেন। তাঁর কথায়, “জনসংযোগই আমার পুজোর অন্যতম উদ্দেশ্য। আর মায়ের পুজো যেখানে ছোট থেকেই করতাম তাই পুজো তো ছাড়তে পারব না। মানুষের মধ্যেই থাকব, পুজোও করব।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
নিয়মিত খবরে থাকতে ফলো করুন
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.