কালীপুজো মানেই আলো আর আনন্দের উৎসব। এ দিন ছোট থেকে বড় সকলেই মেতে ওঠেন আতশবাজির ঝলকানিতে। রংমশাল, চরকি, তুবড়ি, ফুলঝুরি না পোড়ালে আর দীপাবলি কীসের? কিন্তু উৎসবের আনন্দের মাঝেই ঘটে যেতে পারে বিপদ। যথেষ্ট সচেতনতার অভাবে প্রতিবারই এই সমস্যা চোখে পড়ে আমাদের। বাজি পোড়াতে গিয়ে হাত পোড়াননি এমন সংখ্যা নেহাত খুব একটা কম নয়। বিশেষত আতশবাজি পোড়াতে গিয়ে অসাবধানে হাত বা শরীরের কোনও অংশ পুড়ে যেতেই পারে! তাই আগেভাগেই জানা জরুরি, এই ধরনের পরিস্থিতির সম্মুখীন হলে তৎক্ষণাৎ কী করবেন? কীভাবে দ্রুত ও সঠিকভাবে প্রাথমিক চিকিৎসা করে সামলে উঠবেন? পরামর্শ দিচ্ছেন বিশিষ্ট চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. শতরূপা মণ্ডল।কী করবেন?
(১) সবার প্রথমে আহত ব্যক্তিকে আগুনের স্থান থেকে সরিয়ে আনুন। পোড়া স্থানে ১০ থেকে ২০ মিনিট ধরে ঠান্ডা জল ঢালুন। এটি ব্যথা ও ফোলাভাব কমাতে সাহায্য করে। চামড়ায় দাগ পড়ার সম্ভাবনাও কমায়। যদি সঙ্গে সঙ্গে জল না পাওয়া যায়, তাহলে যেকোনও ঠান্ডা ও পরিষ্কার তরল ব্যবহার করতে পারেন। তবে, ভুলেও পোড়া স্থানে সরাসরি বরফ দেবেন না। এতে হিতে বিপরীত ঘটতে পারে।
(২) পোড়া স্থানের চারপাশে থাকা গয়না, ঘড়ি, ব্রেসলেট বা টাইট জামাকাপড় যত দ্রুত সম্ভব খুলে ফেলুন। কারণ ত্বক ফুলে উঠলে এগুলো চেপে বসতে পারে। পোশাক যদি ত্বকে লেগে আটকে থাকে, তাহলে জোর করে তুলবেন না।
(৩) ঠান্ডা করার পর পোড়া অংশটি জীবাণুমুক্ত নন-স্টিক ব্যান্ডেজ, পরিষ্কার প্লাস্টিক ব্যাগ বা ক্লিং ফিল্ম (প্লাস্টিক র্যাপ) দিয়ে ঢেকে দিন। এতে সংক্রমণের ঝুঁকি কমে। ঢিলেঢালা করে ঢাকবেন। ভুলেও টাইট করবেন না। তুলা বা ফ্লাফি কাপড় ব্যবহার করবেন না। এগুলো ক্ষতের সঙ্গে লেগে যেতে পারে।
(৪) যদি ব্যথা বেশি হয় এবং ব্যক্তি সচেতন থাকেন, তাহলে চিকিৎসকের পরামর্শমতো আইবুপ্রোফেন বা প্যারাসিটামল জাতীয় ব্যথানাশক ওষুধ খাওয়া যেতে পারে।
যেগুলো কখনও করবেন না
(১) পোড়া স্থানে ঘরোয়া উপায়ে মাখন, তেল, পেস্ট, টুথপেস্ট বা পাউডার লাগাবেন না। এগুলো তাপ আটকে দিয়ে সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ায়।
(২) ফোস্কা উঠলে তা ফাটাবেন না। ফোস্কা আসলে সংক্রমণ থেকে ত্বককে রক্ষা করে। যদি ফোস্কা নিজে থেকেই ফেটে যায়, তাহলে হালকা সাবান ও জল দিয়ে পরিষ্কার করে জীবাণুমুক্ত ব্যান্ডেজ দিন।
কখন চিকিৎসকের শরণাপন্ন হবেন?
(১) পোড়া দাগ খুব গভীর হলে কিংবা সাদা ও পোড়া মাংসের মতো দেখা গেলে নিকটস্থ হাসপাতালে যান।
(২) পোড়া অংশের আকার আক্রান্ত ব্যক্তির হাতের তালুর চেয়ে বড় হলে চিকিৎসককে দেখানো প্রয়োজন।
(৩) চোখ-মুখ, হাত-পা, যৌনাঙ্গ বা বড় জয়েন্টের অংশে দাহ হলে চিকিৎসককে দেখাতে হবে।
(৪) ব্যথা যদি সাধারণ ওষুধে উপশম না হয়। পোড়া স্থানে লালভাব, পুঁজ বা ফোলাভাব দেখা দিলে তা সংক্রমণের লক্ষণ। এক্ষেত্রে শীঘ্রই চিকিৎসককে দেখান।
চোখে কিছু পড়লে কী করবেন?
আতশবাজির কণা বা স্পার্ক চোখে ঢুকলে কখনও চোখ ঘষবেন না।
চোখটি ১০ মিনিট ধরে ঠান্ডা জল দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এরপর একটি পরিষ্কার কাপড় বা প্লাস্টিক কাপ শিল্ড দিয়ে হালকা করে ঢেকে অবিলম্বে চিকিৎসকের কাছে যান। চোখে কখনও চাপ দেবেন না।
*এই তথ্যগুলি কেবলমাত্র প্রাথমিক চিকিৎসার জন্য। গুরুতর দাহ বা সন্দেহজনক অবস্থায় অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। উৎসবের আনন্দে সতর্ক থাকুন, নিরাপদ থাকুন।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
নিয়মিত খবরে থাকতে ফলো করুন
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.