অভিরূপ দাস: মুখ দেখলে মনে হবে থুত্থুড়ে বুড়ো। কিন্তু বয়স আদতে পনেরোও পেরোয়নি। এখনই মুখগহ্বরে ধু ধু করছে মাড়ির ময়দান। দাঁতের বাহার ক্ষয়ে ক্ষয়ে প্রায় মরুভূমি। এক-দু’জন নয়। কলকাতার আর আহমেদ ডেন্টাল কলেজের আউটডোরে ফি দিন গড়ে যে হাজার রোগী আসেন, তাদের মধ্যে প্রায় তিনশো জনই অপ্রাপ্তবয়স্ক–শিশু, কিশোর, কিশোরী। যে বয়সের সম্পদই হল ঝকঝকে সুগঠিত দাঁতের সারি, সেই বয়সে এই হাল কেন?
চিকিৎসকদের পর্যবেক্ষণ, বড়দের এই রোগই জেঁকে বসেছে শৈশবে। রোগটি হল, অ্যাসিড রিফ্লাক্স। পরিণতি শিশুবয়সে দাঁতের ক্ষয়। ঘরে ঘরে বাবা-মা, কাকা দাদু, দিদিমারা তার শিকার। কিন্তু অস্বাভাবিক ‘লাইফস্টাইলের’ দৌলতে সেই অসুখই থাবা গেড়েছে বাচ্চাদের শরীরে। কাঁচা বয়সেই ক্ষয়ে যাচ্ছে দাঁত।
ইন্ডিয়ান ডেন্টাল অ্যাসোসিয়েশনের বঙ্গীয় শাখার তথ্য চমকে দেওয়ার মতোই। পাকস্থলির অ্যাসিড মারাত্মক শক্তিশালী। খাবার হজমে সাহায্যকারী এই হাইড্রোক্লোরিক অ্যাসিড উল্টো পথে এসে বারোটা বাজিয়ে দিচ্ছে দাঁতের। সাধারণত অ্যাসিডের পিএইচ মাত্রা যত কম তা তত বেশি শক্তিধর। পাকস্থলির অ্যাসিডের পিএইচ হচ্ছে ৩ থেকে ৫। লোহা গলিয়ে দেওয়ার ক্ষমতা রয়েছে তার। আর আহমেদ ডেন্টাল কলেজের সুপার তীর্থঙ্কর দেবনাথ জানিয়েছেন, অ্যাসিডের পিএইচ মাত্রা ৫.৫ এর নিচে হলেই দাঁতের এনামেল গলে যায়। এনামেলের ৯৬ শতাংশই হচ্ছে ইনঅরগ্যানিক উপাদান দিয়ে তৈরি। যার মধ্যে থাকে ক্যালসিয়াম ফসফেট, ক্যালসিয়াম হাইড্রক্সি অ্যাপেটাইট। সুপারের কথায়, “কাচের থেকেও শক্ত দাঁতের এনামেল। কিন্তু তা যখন একবার ভেঙে যায় তখন আর জোড়া লাগে না।” এনামেল দাঁতের স্বাস্থ্য রক্ষা করে। তা ক্ষয়ে গেলে দাঁতের ভিতরে থাকা স্নায়ুগুলি উন্মুক্ত হয়ে যায়। ভঙ্গুর হয়ে যায় দাঁত।
কেন অ্যাসিড উঠে আসছে উপরে? এসএসকেএম এর শিশু শল্য বিভাগের অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর ডা. সুজয় পাল জানিয়েছেন, গলা থেকে পাকস্থলী পর্যন্ত একটি টিউব রয়েছে। একে বলা হয় ইসোফেগাস। ইসোফেগাসের শেষে একটি ভালভ থাকে। এই ভালভ ঠিকমতো কাজ না করলেই অ্যাসিড উঠে আসে মুখে। চিকিৎসকের কথায়, অতিরিক্ত ফাস্ট ফুড খাবার অভ্যেস অ্যাসিড রিফ্লাক্স বাড়াচ্ছে। প্রয়োজনের তুলনায় অতিরিক্ত খাওয়া, সবসময়ই খুচখাচ কিছু মুখে পুরে দেওয়া, খাবার খাওয়ার পর সঙ্গে সঙ্গে ঘুমিয়ে পড়া এসবই দায়ী অ্যাসিড রিফ্লাক্সের নেপথ্যে। ইসোফেগাসের শেষে ভালভটিকে বলা হয় ইসোফেগাস স্পিংটার। এই ভালভ ঠিকভাবে বন্ধ না হলেই অ্যাসিড উপর দিকে উঠে আসে। সঠিক দাঁত মাজার কৌশলও অনেকে জানেন না বলেই জানিয়েছেন, ইন্ডিয়ান ডেন্টাল অ্যাসোসিয়েশনের রাজ্য শাখার সম্পাদক ডা. রাজু বিশ্বাস। তাঁর বক্তব্য, দেড় বছর বয়সের পর থেকেই শিশুকে ব্রাশের ব্যবহার শেখাতে হবে। সাত বছর বয়স পর্যন্ত মা-বাবা তাকে ব্রাশ করিয়ে দেবে। তারপর সে নিজেই ব্রাশ করবে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
নিয়মিত খবরে থাকতে ফলো করুন
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.