স্টাফ রিপোর্টার: বাদুড়বাগানে বাদুড় নেই! শুধু বাদুড়বাগানই-বা কেন? খাস কলকাতার ময়দান চত্বরের গাছের ডালে ডালে ঝুলে থাকত বাদুড়। বাদুড়ের ডানায় ভর করে সন্ধ্যা নামত ময়দানের সবুজে। কিন্তু গত কয়েক বছরে চালচিত্র বদলেছে। বাদুড়বাগান বা ময়দানের গাছে বাদুড় ঝুলতে দেখাই যায় না। ঠিক যেভাবে কলকাতায় ক্রমশ কমছে কাকের সংখ্যা। কমছে চড়ুই, শালিখের মতো গেরস্থের বারান্দা, ঘুলঘুলি ঘেঁষা পাখি। সেই দলেই ঢুকে গিয়েছে বাদুড়!
গোটা ময়দান, রেড রোড বরাবর কোনও বাদুড় নেই। ওয়েস্ট বেঙ্গল বায়ো ডাইভার্সিটি বোর্ডের পর্যবেক্ষণ এমনই। সরকারি সংস্থার অভিমত, খাস কলকাতায় বাদুড় নেই। চামচিকেও নেই। ঘটনা হল একটা সময় কলকাতায় এত বাদুড়ের দাপট ছিল যে, সন্ধ্যায় রাস্তায় বাতি জ্বালানোর সময় দেখা হত কোনও গাছে বাদুড়-চামচিকে বাসা বেঁধেছে। পরে সেই গাছের ডালপালা ছেঁটে ফেলা হত। কিন্তু সেসব এখন অতীত। দু-তিন বছর আগেও ময়দানের বট, অশ্বথ, পাকুড় গাছে দিনভর ঝুলে থাকত বাদুড়। বাদুড়ের বিষ্ঠায় ময়দানের গাছের তলায় বসা মুশকিল ছিল।
এমনই অভিজ্ঞতা পক্ষী বিশেষজ্ঞ অপূর্ব চক্রবর্তীর। অপূর্ববাবুর কথায়, “এক বছরের কিছু বেশি সময় ধরে সন্ধ্যা নামলেই বাদুড়ের উড়ে যাওয়ার সেই গা ছমছমে দৃশ্য আর চোখে পড়ে না। ওয়েস্ট বেঙ্গল বায়ো ডাইভার্সিটি বোর্ডের চেয়ারম্যান ড. অশোককান্তি সান্যাল বলেছেন, “বাদুড় থেকে হাজারও রোগের সংক্রমণ হয়। ভাইরাস ঘটিত রোগের সংখ্যাই বেশি। তাছড়াও বাদুড়-চামচিকে নিয়ে মানুষের মনে নেতিবাচক ধারণাই বেশি। তাই আমরা সবাই উদাসীন। কিন্তু দেখতে খারাপ হলেও বাস্তুতন্ত্রের সামঞ্জস্য বজায় রাখতে বাদুড়েরও ভূমিকা আছে।” বায়ো ডাইভার্সিটি বোর্ডের এক সদস্যের কথায়, “কেন্দ্রীয় প্রাণী সম্পদ মন্ত্রক গবাদি পশুর সমীক্ষা করে। গাধা অথবা খচ্চরের সমীক্ষাও হয়। এমনকী কলকাতার ময়দানে কতগুলো ঘোড়া আছে তারও তথ্য আছে প্রাণী সম্পদ বিকাশ দপ্তরের কাছে। কিন্তু কলকাতার মতো মেট্রোপলিটন শহর থেকে ক্রমশ কমতে শুরু করেছে চড়াই-শালিখ। সেই পথেই ক্রমশ কমতে শুরু করেছে বাদুড়। এই নিয়ে তেমন হেলদোল নেই।”
তা হলে বাদুড়, চামচিকের মতো প্রাণী গেল কোথায়? প্রাণী বিশেষজ্ঞ এবং বায়ো ডাইভার্সিটি বোর্ডের আরেক সদস্য রুদ্রপ্রসাদ দাসের কথা, “খাবারের অভাব। রাতের নিয়ন আলোর ঝলকানি আর যানবাহনের তীব্র হর্ন থেকে বাঁচতে ক্রমশ কলকাতা ছেড়ে হাওড়ার উলুবেড়িয়া, উদয়নারায়নপুর অথবা হুগলির দিকে চলে যাচ্ছে বাদুড়-চামচিকের দল। আবার দক্ষিণে নরেন্দ্রপুর ছাড়িয়েও ডেরা বাঁধতে পারে আপাত নিরীহ কিম্ভুতকিমাকার এই প্রাণী। মজার কথা হল একটি বাদুড় গড়ে ১০ কিলোমিটার উড়ে যায়। কিন্তু তার বেশি হলে আর ফিরে আসে না।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
নিয়মিত খবরে থাকতে ফলো করুন
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.