দুলাল দে: এই দফার মতো ৩১ আগস্ট শেষ হয়ে যাবে ফিফার ট্রান্সফার উইন্ডো। যা খুলবে ফের জানুয়ারিতে। আইএসএলকে ঘিরে যেভাবে ভারতীয় ফুটবলে অনিশ্চয়তা শুরু হয়েছে, তাতে ৩১ আগস্ট চলে গেলে অন্ধকার নেমে আসবে ভারতীয় ফুটবলে। কারণ, দেশের এক নম্বর লিগ বন্ধ হয়ে গেলে সমস্যা তো শুধু ফুটবলারদের কিংবা ক্লাব মালিক নয়, পুরো ফুটবল ইন্ডাস্ট্রির। যেখানে এখন প্রচুর যুবক-যুবতী কাজ করেন। শুধুই এফএসডিএলে নয়, ইন্ডিয়ান সুপার লিগের প্রতিটি ক্লাবে। ফলে লিগ না হলে একটা ইন্ডাস্ট্রি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। আর তাতেই সবাই মিলে সব পক্ষ থেকে এই মরশুমের ইন্ডিয়ান সুপার লিগ শুরু করার একটা উদ্যোগ শুরু হয়েছে।
মূল সমস্যাটা হয়েছে চুক্তি নিয়ে। ২০২৫-এর ডিসেম্বর পর্যন্ত ফেডারেশনের সঙ্গে চুক্তি রয়েছে এফএসডিএলের। কিন্তু এই মরশুমে নির্দিষ্ট সময়ে আইএসএলে শুরু হলে তা চলবে এপ্রিলের শেষ পর্যন্ত। কিন্তু চুক্তি তো ডিসেম্বর পর্যন্ত। তাহলে জানুয়ারি থেকে বিনা চুক্তিতে কীভাবে হবে আইএসএল? সমস্যাটা এখানেই শুরু হয়েছে। পাশাপাশি সুপ্রিম কোর্ট থেকেও জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, কল্যাণ চৌবের নেতৃত্বে ফেডারেশনের কোনও কমিটি এফএসডিএলের সঙ্গে চুক্তি বৃদ্ধি নিয়ে কোনও আলোচনা করতে পারবে না। কারণ, সেই সময় মহিলাদের অনুর্ধ-১৭ বিশ্বকাপ থাকার জন্য, তড়িঘড়ি করে নতুন করে ফেডারেশনের সংবিধান তৈরি না করিয়েই নির্বাচন করানো হয়। আর তাতেই ক্ষমতায় আসেন কল্যাণ চৌবেরা। তারপর থেকে ফেডারেশনের সংবিধান তৈরির বিষয়টা এতদিন ধরে সুপ্রিম কোর্টের ঘরেই ছিল। ঠিক হয়েছে, আগে সংবিধান ঠিক হবে। তারপর নির্বাচন।
এদিকে আবার দেশের সব ক্রীড়া সংস্থাগুলিতে একটাই সংবিধানকে আশ্রয় করে সংসদে স্পোর্টস বিল আনার প্রস্তাব নিতে চলেছে কেন্দ্রীয় ক্রীড়া দফতর। সেই স্পোর্টস বিলের খসড়াও বিভিন্ন ক্রীড়া সংস্থাতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। ফলে খুব দ্রুত যে সংবিধান ঠিক করে ফেডারেশনে নির্বাচন হবে তা বলাই বাহুল্য। এই অবস্থায় কল্যাণ চৌবের অস্থায়ী কমিটিকে এফএসডিএলের সঙ্গে চুক্তি সম্পর্কিত আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা জানিয়ে রেখেছে আদালত। সব মিলিয়ে তাই এই মরশুমের আইএএল শুরু হওয়া নিয়ে মারাত্মক জট পাকিয়ে গিয়েছে। কিন্তু এই জট খুলতে এখন চেষ্টা করছে সব পক্ষই। আর তাতে যা পরিস্থিতি দাঁড়িয়েছে, তাতে হয়তো ফের ফেডারেশনের বাইরের লোক নিয়ে ‘তিন সদস্যর’ কমিটি তৈরি হয়ে যেতে পারে। যাঁরা এই মরশুমের আইএসএল করা নিয়ে আপাতত ফেডারেশনের প্রতিনিধি হিসেবে এফএসডিএলের সঙ্গে কথাবার্তা শুরু করবে। সেখানে কল্যাণ চৌবে অ্যান্ড কোং এর কোনও ভূমিকাই থাকবে না। কিন্তু চুক্তিতো ডিসেম্বর পর্যন্ত। তাহলে ২৬-এর এপ্রিল পর্যন্ত আইএসএল হবে কী করে?
শোনা যাচ্ছে, ভারতীয় ফুটবলের অচলাবস্থা কাটাতে উদ্যোগী হতে চাইছে এফএসডিএলও। সেরকম হলে ডিসেম্বরেই শেষ হয়ে যাওয়া চুক্তি, ভারতীয় ফুটবলের স্বার্থে আপাতত ২০২৬-এর এপ্রিল পর্যন্ত চলতে পারে। সেক্ষেত্রে দু’পক্ষ রাজি হয়ে পুরনো শর্তে চুক্তি বেড়ে যেতে পারে ২৬’এর এপ্রিল পর্যন্ত। তারমধ্যে নতুন সংবিধানে নির্বাচন হয়ে যাবে ভারতীয় ফুটবল ফেডারেশনে। একদিকে এপ্রিল পর্যন্ত আইএসএল চলবে। পাশাপাশি ফেডারেশনের নব নির্বাচিত কমিটি এফএসডিএলের সঙ্গে আলাচনায় বসবে নতুনভাবে চুক্তির শর্ত ঠিক করতে। এতে খেলাও যেরকম হবে, সেরকম ফেডারেশন এবং এফএসডিএলের মধ্যে চুক্তির শর্তও সময় নিয়ে ধীরে সুস্থে ঠিক করা যাবে। শোনা যাচ্ছে, এরকম একটা পরিস্থিতি নিয়ে রাজি হয়ে গিয়েছেন এফএসডিএল কর্তারাও। নির্দিষ্ট সময়ে আইএসএল শুরু করতে চান, বলে ক্লাবগুলিকেও প্রস্তুত থাকার জন্য আভাস দিতে শুরু করেছে এফএসডিএল। পাশাপাশি আইএসএলের ক্রীড়াসূচীও তৈরি করে রাখা হচ্ছে। যে মুহূর্তে জট খুলবে, সেই মুহূর্তে সেপ্টেম্বরে আইএসএল শুরু করার জন্য প্রস্তুতি শুরু করে দেবে এফএসডিএল। ক্লাবগুলিকে আগেই আভাস দিয়ে রাখার কারণ, ক্লাবগুলিও যেন নিজেদের মতো করে প্রস্তুতি নিয়ে রাখতে পারে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
নিয়মিত খবরে থাকতে ফলো করুন
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.