Advertisement
Advertisement

Breaking News

Iran

আমেরিকার সঙ্গে পরমাণু চুক্তিতে আপস ইরানের! নিষেধাজ্ঞার পাহাড়েই সুর নরম তেহরানের?

পরমাণু অস্ত্র নিয়ে অহরহ গবেষণা করে চলেছে ইরান।

Iran Ready To Compromise With US On Nuclear Program
Published by: Suchinta Pal Chowdhury
  • Posted:May 27, 2025 2:37 pm
  • Updated:May 27, 2025 2:43 pm   

সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: দীর্ঘদিন ধরে হুঁশিয়ারি পালটা হুঁশিয়ারির পর আমেরিকার সঙ্গে পরমাণু কর্মসূচি বা পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা করছে ইরান। এমনকী মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সামনে সুর নরম করেছে তেহরান! পরমাণু অস্ত্র তৈরি না করার কথা দিয়েছে তারা। কিন্তু রয়েছে শর্ত। ‘ইউরেনিয়াম এনরিচমেন্টে’ কোনও রকম বাধা দেওয়া যাবে না ইরানকে। তবে সব মিলিয়ে এক সপ্তাহ ধরে চলা এই আলোচনাকে সদর্থকই বলছেন ট্রাম্প।

Advertisement

গত এপ্রিল মাসে আলোচনার টেবিলে আসে দুই পরমাণু শক্তিধর দেশ। প্রথম দফায় ওমানে দ্বিতীয় দফায় রোমে বৈঠক হয় মার্কিন রাষ্ট্রদূত স্টিভ উইটকফ ও ইরানের বিদেশমন্ত্রী আব্বাস আরাকচি। সিএনএন সূত্রে খবর, সোমবার পরমাণু পরিকল্পনা নিয়ে আমেরিকার সঙ্গে আপস করতে রাজি হয়েছে ইরান। এমনটাই জানিয়েছেন সেদেশের বিদেশমন্ত্রকের মুখপাত্র ইসমাইল বাঘাই। ওয়াশিংটনকে আশ্বাস দিয়ে তিনি বলেন, “আমরা কথা দিতে রাজি যে পরমাণু অস্ত্র তৈরি করবে না। আমাদের যে পরমাণু পরিকল্পনা আছে সেটা খুবই স্বাভাবিক। আমরা এমনটা করেই থাকি। কিন্তু আমরা হাতিয়ার তৈরি করব না। তবে আমাদের একটাই শর্ত রয়েছে। ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণে ইরানকে কোনও বাধা দেওয়া যাবে না।” ফলে পরমাণু চুক্তি স্বাক্ষর নিয়ে দু’দেশ আরও কয়েক ধাপ এগোল বলেই মনে করা হচ্ছে।

এদিকে, ইরানের সঙ্গে এহেন আলোচনায় সন্তুষ্ট মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। ইরানের এই সুর নরমে প্রশ্ন উঠছে, আমেরিকা ও পশ্চিমা বিশ্বের একের পর এক নিষেধাজ্ঞায় বেসামাল হয়েই কি আপস করতে রাজি হয়েছে তারা? তবে পুরোপুরি দমে যাচ্ছে না তেহরান। ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেস্কিয়ান সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, “যদি আমেরিকার সঙ্গে এই পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে চুক্তি করতে আমরা ব্যর্থ হই তাহলেও ইরান টিকে থাকবে। এমন ভাবার কোনও কারণ নেই যে আমরা না খেতে পেয়ে মরে যাচ্ছি। নিষেধাজ্ঞা আরোপের কারণে আমরা চুক্তি করতে চাই তা নয়। চুক্তি না হলেও আমরা বেঁচে থাকার পথ খুঁজে নেব।”

বিশ্বশক্তির সমীকরণ দেখলে বোঝা যাবে, পরমাণু অস্ত্র নিয়ে অহরহ গবেষণা করে চলেছে ইরান। একের পর এক যুদ্ধাস্ত্রের পরীক্ষা চালাচ্ছে তারা। যা চিন্তার কারণ আমেরিকা ও পশ্চিমি দুনিয়ার। তাই নানা নিষেধাজ্ঞা চাপানো হচ্ছে তেহরানের উপর। সম্প্রতি সেদেশের উপর ড্রোন উৎপাদনে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল পশ্চিমা বিশ্ব। কিন্তু তাতে দমে যায়নি ইরান। পালটা ভয়ংকর হাতিয়ার বানিয়েছে তারা। কামিকাজে ড্রোনটিকে অত্যাধুনিক প্রযুক্তিতে গড়ে তোলা হয়েছে। যা শত্রুপক্ষের উপর আরও শক্তিশালী আঘাত হানতে সক্ষম। কয়েকদিন আগেই প্রকাশ্যে আসে ইরানের ইসলামিক রেভেলিউশনারি গার্ড কর্পসের (আইআরজিসি) ‘মিসাইল সিটি’। যা আসলে তাদের তৃতীয় ক্ষেপণাস্ত্র ভাণ্ডার। যা আরও চিন্তা বাড়ায় হোয়াইট হাউসের।

উল্লেখ্য, বারাক ওবামা মার্কিন প্রেসিডেন্ট থাকাকালীন ইরানের সঙ্গে পরমাণু নিরস্ত্রীকরণ চুক্তি স্বাক্ষর করেছিল আমেরিকা, ব্রিটেন, চিন, ফ্রান্স ও রাশিয়া। ২০১৫-তে হওয়া এই চুক্তির শর্তানুযায়ী, তাদের যে কোনও রকমের পরমাণু কার্যক্রম বন্ধ রাখবে ইরান। প্রয়োজনে তাদের যে কোনও পারমাণবিক উৎপাদন কেন্দ্রগুলোতে নজরদারি চালাতে পারবে আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি কমিশন বা ইন্টারন্যাশনাল অ্যাটমিক এনার্জি এজেন্সি। পরিবর্তে ইরানের উপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে মোটা অঙ্কের ত্রাণ পাঠাবে আমেরিকা। কিন্তু ২০১৮ সালে চুক্তি থেকে বেরিয়ে আসার সিদ্ধান্ত নেন তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। তিনি অভিযোগ করেন, শর্ত না মেনে গোপনে আণবিক অস্ত্র তৈরির চেষ্টা করছে ইরান।

এরপর ২০২০ সালে ট্রাম্প জমানাতেই নিহত হন ইরানের ‘কাডস ফোর্স’-এর কমান্ডার জেনারেল কাশেম সোলেমানি। সেবছরের ৩ জানুয়ারি ট্রাম্পের নির্দেশেই বাগদাদ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে মার্কিন ড্রোন হামলা হয়। সোলেমানি-সহ প্রাণ যায় ৮ জনের। পালটা মার্কিন সেনাঘাঁটিতে রকেট হামলা চালিয়েছিল ইরানের সেনা। সেই থেকেই দুদেশের মধ্যে সংঘাত আরও তীব্র হয়। তবে ক্ষমতায় এসে ফের সেই চুক্তি বলবৎ করার চেষ্টা করেন প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। কিন্তু তিনিও সফল হননি। উলটে গাজায় হামাস-ইজরায়েল যুদ্ধে ইরানের সঙ্গে আমেরিকা নতুন করে সংঘাতে জড়ায়। বিশ্লেষকরা বলছেন, বিভিন্ন দেশের উপর চাপ বাড়াতে ট্রাম্পের হাতিয়ার নয়া শুল্কনীতি। যার প্রভাব পড়ছে ইরানের অর্থনীতিতেও। তার উপর নিষেধাজ্ঞার পাহাড়। তাই আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের পথ চাইছে তেহরান।

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ